—প্রতীকী চিত্র।
কেন্দ্রের সরকার গঠনের নির্বাচন। জেলার দুই লোকসভা আসনের মধ্যে একমাত্র এই শহরই কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজের সরাসরি ‘ছোঁয়া’ পেয়ে থাকে। সৌজন্যে কেন্দ্রের অধীনস্থ ভারতীয় রেল। গত পাঁচ বছরে রেলের কল্যাণে সেতু, উড়ালপুল, রাস্তা, আন্ডারপাস, স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের সাক্ষী থেকেছে এই শহর। সেই কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন মেদিনীপুরের বিজেপির বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এ বার নির্বাচনে দিলীপ অন্যত্র সরলেও, প্রচারে নেমে পূর্বসূরির কর্মযজ্ঞের ‘লিগ্যাসি’কে হাতিয়ার করেই এগোচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। অন্য দিকে পাল্টা পুরসভার উন্নয়নে রেলের বাধা, রেলবস্তি উচ্ছেদ, রেল বাজারের হতশ্রী চেহারা বদলাতে ‘গ্যারান্টি’ দিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়াও।
শহরবাসীর দাবি, এখানে প্রতিবার নির্বাচনে রেলের উন্নয়নই হয় রেলশহরের অন্যতম বাজি। তবে এ বার তা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় গোটা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের ‘পাখির চোখ’ রেলশহর। কারণ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দিলীপ ঘোষের জয়ে শুধু খড়্গপুর সদরের ভোটের ‘লিড’ ছিল ৪৫ হাজার। এমনকি ওই বছরই বিধানসভা উপ-নির্বাচনে প্রথমবার খড়্গপুর সদরে তৃণমূল জিতলেও ২০২১ সালে সেটাও হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। জয়ী হয় বিজেপি। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে বোঝা যায় গেরুয়া হাওয়া তখন থেকেই বইতে শুরু করেছিল রেলশহরে। সে বার নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও রেলশহর ছিল ব্যতিক্রমী ভূমিকায়। সরাসরি বললে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিধানসভা উপ-নির্বাচন বাদ দিলে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনেই রেলশহর থেকেছে গেরুয়া শিবিরের পাশেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, রেলকে কেন্দ্র করে শহরে বসবাসকারী একটা বড় অংশের ভোটার ভিন্ প্রদেশের হওয়ায়, জাতীয় রাজনীতি বিচার করে ভোট দেন। ২০১৪ সালের আগে স্বাভাবিক ভাবে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস রেলশহরে প্রতি নির্বাচনেই এগিয়ে থাকত। আর ২০১৪ সালের পরে নানা রণকৌশল সত্ত্বেও রেলশহর একটি উপ-নির্বাচন ছাড়া কোনও সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূলের দিকে ঝোঁকেনি। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের নির্বাচনী কমিটির সভাপতি কল্যাণী ঘোষ বলছেন, ‘‘এই শহরে ভিন্ন প্রদেশের মানুষ ও রেলের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বেশি থাকায়, তাঁরা কেন্দ্রের শাসকদলকে দেখে ভোটটা দেন।’’ পরিস্থিতি বদলে রেল-বিজেপির আঁতাতের অভিযোগে সরব হয়ে মোড় ঘোরাতে সচেষ্ট তৃণমূল। যদিও বিজেপির খড়্গপুর সদর বিধানসভার বিশেষ ইন-চার্জ অভিষেক আগরওয়াল বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে দিলীপদার তৎপরতায় যে ভাবে সেতু, আন্ডারপাস, উড়ালপুল, রাস্তার মতো কাজ রেল করেছে, তা মানুষের সামনেই রয়েছে।’’
বিজেপিকে বিঁধতে কেন্দ্রের অনুন্নয়ন ও রেলবস্তির বাসিন্দাদের উপর রেলের জুলুমের অভিযোগকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। গত ৫ মার্চ খোদ এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা থেকে রেলবস্তির উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। এর মাঝে চলেছে দলবদল। বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রদীপ পট্টনায়েক গিয়েছেন তৃণমূলে। বিজেপিতে ফিরেছেন পুর-প্রতিনিধি মুকেশ হুমনে। প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা নির্বাচনী কমিটির সদস্য প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘এই শহরে রেলে চাকরির সূত্রে আসা বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা দল দেখে ভোটটা দেন।’’ কৌশল বদলে রেলকে নিশানা করেছেন তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়াও। রেলের বাজারে ব্যবসায়ীদের উপর রেলের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ‘গ্যারান্টি’ দিয়েছেন জুন। বলেছেন, ‘‘গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনারা যদি আমার পাশে থেকে সংসদে পৌঁছে দেন তা হলে সংসদে প্রথম বক্তৃতায় গোলবাজারের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরব।’’
নিজেকে ‘দিদিভাই’ বলে কোনও বস্তি উচ্ছেদ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। বলেছেন, ‘‘এখানে প্রচুর সমস্যা এবং সেগুলির মধ্যে বহু সমস্যার দিলীপদা সমাধান করেছেন। কিছু বাকি। সেগুলি আমি করব।’’ বিজেপি-তৃণমূলের সমালোচনা করে নিজের কথা বলছেন রেলশহরের ‘ঘরের ছেলে’ সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট। তিনি বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে রেলশহরের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বস্তিবাসীর উন্নয়ন ও দুষ্কৃতী-মুক্ত পরিবেশের জন্য আপ্রাণ লড়াই চালাব।’’