Lok Sabha Election 2024

পদ্মের ‘মুখ’ হতে চাওয়া শুভেন্দুর মুখরক্ষা হল না, বিজেপির অন্দরেই উঠছে অধিকারী বিরোধী আওয়াজ

দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপির রাজ্য নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কারণ, এই নির্বাচনের ফল তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনের পথনির্দেশক হতে পারত। কিন্তু অস্তাচলে বিজেপির স্বপ্ন।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ১৫:০৫
Share:

শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।

দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কার্যত অগাধ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের চেয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতার উপরে বেশি ভরসা করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশেষত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলার ভোটে শুভেন্দুর মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে বিজেপির অন্দরেই আলোচনা ছিল। কিন্তু গোটা দেশে বিজেপির শক্তিক্ষয়ের দিনে বাংলাতেও বড় ধাক্কা খেয়েছে পদ্মশিবির। সেই ধাক্কার পরে বিজেপিতে শুভেন্দুর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘মুখ’ হয়ে উঠতে পারতেন শুভেন্দু। কিন্তু ফলের যে ইঙ্গিত, তাতে মুখ তো দূরস্থান, মুখরক্ষা করাই মুশকিল বিরোধী দলনেতার!

Advertisement

শুভেন্দুর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে মেদিনীপুর আসনে অগ্নিমিত্রা পাল এবং বর্ধমান-দুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষ পিছিয়ে পড়ার কারণে। এটা সর্বজনবিদিত যে, শুভেন্দুর ইচ্ছাতেই দিলীপকে তাঁর জেতা আসন থেকে অন্যত্র সরিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একটা সময়ে দিলীপ বেঁকে বসবেন বলেও মনে করা হলেও নেতৃত্বের প্রতি ‘আনুগত্য’ দেখিয়ে ২০১৯ সালে আড়াই হাজারের কম ভোটে জেতা আসনেই প্রার্থী হন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। অথচ, গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুরে দিলীপ জিতেছিলেন প্রায় ৮৯ হাজার ভোটে। সেই সঙ্গে দিলীপের নেতৃত্বেই ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। পদ্মশিবিরের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, শুভেন্দু ‘গোঁ’ ধরে বসে না থাকলে মেদিনীপুরে পিছিয়ে পড়তে হত না। রাজ্যের সবচেয়ে সফল সভাপতি দিলীপকেও আনকোরা আসনে গিয়ে পরাজয়ের মুখে পড়তে হত না। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব দিলীপ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির ‘আদি’ নেতারা। তাঁদের দাবি, শুভেন্দুর জন্যই রাজনীতিতে এসেই জয় পাওয়া এবং অন্যদের জেতানো দিলীপকে হারানোর ছক করে অন্য আসনে পাঠানো হয়েছিল। ওই গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, ‘‘দিলীপদার জনপ্রিয়তাকে খাটো করে দেখা হয়েছে। সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভুল। আর শুভেন্দুর উপরে এতটা ভরসা করাও ঠিক হয়নি।’’

লোকসভা ভোট ২০২৪

উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে একটি ছাড়া সব জায়গায় জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বার যা ফলাফলের গতিপ্রকৃতি, তাতে উত্তরের একাধিক আসনে বিজেপির পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দোলাচল রায়গঞ্জ আসন নিয়েও। উত্তরে এই আসনে শুভেন্দুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত কার্তিক পালকে প্রার্থী করে বিজেপি। আপাতত এগিয়ে কার্তিক। শুভেন্দুর ‘পছন্দ’ হিসাবে অগ্নিমিত্রা ছাড়াও পাঁচ বিধায়ককে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। বর্ধমান পূর্বে অসীম সরকার, ঘাটালে হিরণ চট্টোপাধ্যায়, বারাসতে স্বপন মজুমদার, মুর্শিদাবাদে গৌরীশঙ্কর ঘোষ এবং আলিপুরদুয়ারে মনোজ টিগ্গা। এঁদের মধ্যে মনোজ ছাড়া সকলেই শুভেন্দুর ‘পছন্দের প্রার্থী’। কিন্তু মনোজ ছাড়া কেউই জেতার মতো জায়গায় নেই। সকলেই বড় ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন। শুভেন্দুকে কেন প্রার্থী বাছাইয়ে এত স্বাধীনতা দেওয়া হল কিংবা নিজের মতো করে প্রচার করতে দেওয়া হল কেন সে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। রাজ্য স্তরের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুদা ভাল নেতা। কিন্তু দলবদল করা নেতাদের তুলনায় যে একেবারে ঘরের লোকেদের উপরে আমাদের ভোটারেরা বেশি ভরসা রাখেন সেটাই বুঝতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তার মাশুল গুনতে হচ্ছে রাজ্য বিজেপিকে।’’

Advertisement

লোকসভা ভোট ২০২৪

শুধু প্রার্থীবাছাই নয়, প্রচারেও মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন শুভেন্দু। গোটা রাজ্যে শ’দেড়েক সভা এবং রোড-শো করেছেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন ঠিকই। কিন্তু দিনের শেষে হাসি নেই তাঁর মুখে। বার বার তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে। কিন্তু ভোটগণনার সকাল থেকেই কাঁথিতে নিজের বাড়ি শান্তিকুঞ্জেই রইলেন শুভেন্দু। ভোটের ফল অনুকূল হলে তিনি কলকাতায় আসতেন বিকেলের দিকে। কিন্তু এখন সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, তাঁর ‘ঘরের আসন’ বলে পরিচিত কাঁথি ও তমলুক আসনেও দুপুর পর্যন্ত খুব সুবিধাজনক জায়গায় নেই বিজেপি। কখনও এগিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। কখনও বিজেপি। সব মিলিয়ে উদ্বেগেই থাকার কথা শুভেন্দুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement