গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার তিন আসনে ভোটদানের হারে প্রথম দফার মতোই দ্বিতীয় দফাতেও ২০১৯ সালের থেকে পিছিয়ে রইল ২০২৪ সাল। দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাট— এই তিন কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল থেকেই ভোটারেরা বুথের বাইরে লাইন দেন। দার্জিলিঙে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকলেও রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাটে ভালই গরম ছিল। সেই গরম উপেক্ষা করেই এই কেন্দ্রের ভোটারেরা ভোট দিতে আসেন। দ্বিতীয় দফায় এই তিন আসনে কত ভোট পড়ল, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক মহলে। শনিবার নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটদানের হারের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বার এই তিন কেন্দ্রে প্রায় চার শতাংশ কম ভোট পড়েছে।
কমিশন সূত্রে খবর, শুক্রবার বাংলার তিন কেন্দ্রের গড় ভোটদানের হার ৭৬. ৫৮ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের তুলনায় কিছুটা কম। সে বছর দার্জিলিং, রায়গঞ্জ এবং বালুরঘাট— এই তিন কেন্দ্রে গড় ভোটদানের হার ছিল ৮০.৯ শতাংশ। শুধু গড় ভোটদানের হার নয়, তিন কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতেই গত বারের তুলনায় এ বার কম ভোট পড়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে শুক্রবার ভোট পড়েছে ৭৪.৭৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রেই ভোটদানের হার ছিল ৭৯.৩৩ শতাংশ। সে বছর দার্জিলিঙে পদ্ম ফুটেছিল। বিজেপির টিকিটে বড় জয় পান রাজু বিস্তা। এ বারও পদ্মশিবির তাঁকেই প্রার্থী করেছে। তবে তৃণমূল ২০২৪ সালে প্রার্থী বদল করে। অমর সিংহ রাইয়ের পরিবর্তে বাংলার শাসকদল প্রার্থী করে গোপাল লামাকে। এ ছাড়াও লড়াইয়ে ছিলেন কংগ্রেসের মুনীশ তামাং। তিন কেন্দ্রের মধ্যে শুক্রবার দার্জিলিং লোকসভা আসনেই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে।
বাংলার তিন আসনের মধ্যে শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বালুরঘাটে। তবে ২০১৯ সালের তুলনায় তা কমই। সে বছর এই আসনে ভোট পড়েছিল ৮৩.৮১ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়াল ৭৯.০৯ শতাংশ। বালুরঘাট কেন্দ্রে এ বার বিদায়ী সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রার্থী করে বিজেপি। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের টিকিটে লড়েন বিপ্লব মিত্র।
কমিশন সূত্রে খবর, রায়গঞ্জে শুক্রবার ভোট পড়েছে ৭৬.১৮ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের সাড়ে তিন শতাংশ কম। সে বছর এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৭৯.৮৮ শতাংশ। এ বার এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে কার্তিক পালকে। ২০১৯ সালে এই আসনে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। পরে তাঁকে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীও করা হয়েছিল। তবে এ বার বিজেপি দেবশ্রীকে আর এই আসন থেকে টিকিট দেয়নি। কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁকে। রায়গঞ্জে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করেছে কৃষ্ণ কল্যাণীকে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। ভোট মিটতেই পদ্মশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন কৃষ্ণ।
কমিশনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বাংলায় ভোটদানের হারে প্রথম দফার ধারাই বজায় থাকল দ্বিতীয় দফাতেও। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচনে এ রাজ্যের তিন কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে ভোটগ্রহণ ছিল। এই তিন লোকসভা আসনে এ বার ভোটদানের হার গড়ে ছিল ৮৪.৫৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম। শুধু মোটের হিসাবে নয়, তিন আসনে আলাদা আলাদা ভাবে ভোটের হারের দিক থেকেও গত বারের তুলনায় এ বার কম ভোট পড়েছে।