রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
বাংলায় চকোলেট বোমা ফাটলেও তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআই, এনআইএ, এনএসজির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। সন্দেশখালিতে সিবিআই এবং এনএসজি হানা প্রসঙ্গে সরব হয়ে বিজেপির সরকারকে এ ভাবেই কটাক্ষ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, শুক্রবার সন্দেশখালি থেকে যে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের কথা সিবিআই জানিয়েছে, তা আদৌ ওখান থেকে পাওয়া গিয়েছে কি না,সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করলেন তিনি।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হার হয়ে প্রচার করতে শনিবার কুলটিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কুলটির কিশোর সঙ্ঘ মাঠের জনসভা থেকে সন্দেশখালিতে সিবিআই-এনএসজি অভিযান নিয়ে সরব হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেন মিথ্যা কথা বলে বিজেপি? কেন এখানে চকোলেট বোমা ফাটলেও সিবিআই, এনআইএ, এনএসজির দরকার পড়ে? যেন যুদ্ধ চলছে? পুরোটাই একতরফা ভাবে হয়। রাজ্য পুলিশকে কিছু জানানো হয় না। কেউ জানে না কোথা থেকে কী পাওয়া গিয়েছে। হয়তো ওরাই গাড়ি থেকে নিয়ে এসে দেখিয়েছে। কোনও প্রমাণ নেই।’’
শুক্রবার সন্দেশখালিতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। প্রচুর অস্ত্র এবং বোমা মজুত রয়েছে, এমন খবর পাওয়া মাত্রই শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠের আত্মীয় আবু তালেব মোল্লার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সিবিআইয়ের দাবি, তল্লাশি অভিযানে মাটি খুঁড়ে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা মেলে। বেলা বাড়তে সেখানে পৌঁছয় এনএসজি-ও (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড)। অস্ত্র খুঁজে বার করতে নিয়ে আসা হয় স্বয়ংক্রিয় রোবট। সন্দেশখালিতে দিনভর তল্লাশি চালিয়ে বহু অস্ত্রশস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করে সিবিআই। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে যেমন রয়েছে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, তেমনই রয়েছে পুলিশের ব্যবহারের রিভলভারও। এ ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে কার্তুজ, দেশি বোমা। সিবিআইয়ের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, অস্ত্রের পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে কিছু নথিও। যেখানে রয়েছে জেলবন্দি তৃণমূল নেতা শাহজাহানের সচিত্র পরিচয়পত্র। দিনভর তল্লাশি চালানোর পর রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে সন্দেশখালি থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআই এবং এনএসজি। এই ঘটনায় শুক্রবার হইচই পড়ে গিয়েছিল রাজ্যজুড়ে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করতেও দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু এ বার সন্দেশখালি প্রসঙ্গে পাল্টা বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে এক বিজেপি নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, মজুত করা বোমা থেকেই এই বিস্ফোরণ। সেই ঘটনা নিয়েও শনিবাার বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর অভিযোগ, বোমাবাজি করে নির্বাচনে জিততে চাইছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে আসার আগে শুনলাম এক বিজেপি নেতার বাড়িতে বোমা জমা রয়েছে। ভাবছে বোমা মেরে নির্বাচন জিতে যাবে।’’
কুলটির সভা থেকে মমতার হুঙ্কার, ‘‘দুই দফার নির্বাচনের পরেই ঘাবড়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিজেপি কিছুতেই জিততে পারবে না।’’
এসএসসি চাকরি বাতিল নিয়েও বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘চাকরি তো দেয় না। কিন্তু চাকরি কেড়ে নেয়। যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়াব আমি এবং আমার সরকার।’’
প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘গতকাল মোদী বলেছেন, বাংলায় তৃণমূলের জন্য উন্নয়ন থেমে গিয়েছে। ভারতের জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ৮.৮৭ শতাংশ। বাংলায় ১১.৮৪ শতাংশ। আপনি আগে পদত্যাগ করুন। তার পর এ সব বলুন।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভোট মিটে গেলেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে। বলে দিলাম। আমরা যা বলি, তাই করি। আমরা যা দেব বলি, তাই দিই। বিজেপি তা করে না। আমরা বাংলা জুড়ে উন্নয়ন করছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘কেন চকোলেট বোমা ফাটলেও সিবিআই, এনএসজির দরকার পড়ে? যেন যুদ্ধ হচ্ছে? পুলিশকে জানানো হয়নি। একতরফা হয়েছে। কেউ জানে না কোথা থেকে কী পাওয়া গিয়েছে। হয়তো আগে থেকে নিজেরাই ওখানে রেখে এসেছে। আজকে শুনলাম সন্দেশখালির বিজেপি নেতার বাড়িতে বোমা জমা রয়েছে। মনে করছে, বোমা রেখে এবং চাকরি খেয়ে জিতে যাবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা অনেক বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। আরও বাড়ি করে দেব। ডিসেম্বর মাসে ৬০ হাজার টাকা দেব। পরে আরও ৬০ হাজার দেব। ওষুধের দাম বাড়িয়েছে বিজেপি সরকার। প্রেশার, সুগারের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে মোদীর দাম কমেছে।’’
আগের বার টাকা ছড়িয়ে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী। মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘শুনেছি আগের বার বিজেপি প্রার্থী টাকা দিয়ে জিতেছিলেন ভোটে। এ বারও টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করা হবে। টাকা দিতে এলেই আগে ১৫ লক্ষ চাইবেন।’’
আসানসোল এবং তদ্সংলগ্ন এলাকায় শিল্প হলে বাংলার এক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। কুলটির সভা থেকে জানালেন মমতা।
শুনছি, এখানকার কয়লাখনি বিক্রির চক্রান্ত চলছে। কেন্দ্রের সরকারকে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতার। বলেন, ‘‘এখানে কর তুলে নিয়ে গেলেও আমরা সুবিধা পাই না। রেশন বাবদ ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়নি কেন্দ্র। এত মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমি আগে দেখিনি। শুধু বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করেন।’’
বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আপনিও তো শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। যখন গদ্দার শিখ পুলিশকর্মীকে ‘খলিস্তানি’ বললেন তখন কেন চুপ ছিলেন?’’
কুলটির জনসভায় প্রবেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গাপুর থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে কুলটি পৌঁছেছেন তিনি। কপ্টারে বসতে গিয়ে পড়ে গিয়ে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী। তবে সামলে নিয়ে সভাস্থলে পৌঁছন।
আসানসোলে লোকসভা ভোটের প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’টি জনসভা রয়েছে তাঁর। একটি কুলটিতে, অন্যটি আসানসোলে। তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার হয়ে প্রচার করবেন তিনি। ওই কেন্দ্রে শত্রুঘ্নের লড়াই বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে। প্রথম সভাটি মমতা করবেন কুলটির কিশোর সঙ্ঘ মাঠে।