গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। শুভেন্দু অধিকারী তখন তৃণমূলে। মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব তাঁর হাতেই দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে এখনও এমন আলোচনা শোনা যায় যে, দলের মুর্শিদাবাদ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল শুভেন্দুরই।
রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলির অন্যতম মুর্শিদাবাদে বরাবর সংখ্যালঘু সাংসদ পেয়েছে। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই ২০১৯ সালে এই আসনে হুমায়ুন কবীরকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। সে বার ৯ শতাংশের বেশি ভোট পেলেও তৃতীয় স্থানে ছিল তারা। সে বার কংগ্রেস-সিপিএমের জোট ছিল না। ফলে কংগ্রেসকে দ্বিতীয় করে ২,২৬,৪১৭ ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। সিপিএম ছিল চার নম্বরে। তারা ভোট পেয়েছিল ১,৮০,৭৯৩। বাম-কংগ্রেসের ২০১৯ সালের প্রাপ্ত ভোট মেলালে সেই অঙ্কও এ বারের বাম প্রার্থী তথা সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পক্ষে খুব সন্তোষজনক নয়।
তবে এই পাঁচ বছরে অনেক অঙ্ক বদলে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সিপিএম শূন্যে পৌঁছেছে আর কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপি বাংলার প্রধান বিরোধী দল হয়ে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, যিনি এখন বিরোধী দলনেতা, সেই শুভেন্দুই গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের পক্ষে মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগেই মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন শুভেন্দু। সে বার ভোটের ফলাফলে দেখা যায় অধীররঞ্জন চৌধুরীর জেলার তিনটি আসন-সহ মুর্শিদাবাদ লোকসভা এলাকার হরিহরপাড়া আসনটি জিতেছে তৃণমূল। সে বারই এই লোকসভার অন্তর্গত নদিয়া জেলার করিমপুর থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। তার পরে লোকসভা ভোটে সিপিএমের কাছ থেকে আসনটি কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি সাতটি বিধানসভা এলাকাতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি প্রথম বার মুর্শিদাবাদের কোনও আসনে জয় পায় ২০২১ সালে। সেটা আবার খোদ মুর্শিদাবাদ বিধানসভা আসনেই। এ বার বিজেপি লোকসভায় সংখ্যালঘু প্রার্থী দেয়নি। তারা প্রার্থী করেছে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষকে। তাঁর হয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। গিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও সেখানে প্রচারে গিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কোনও কর্মসূচি ওই লোকসভা আসনে নেই। মুখে না বললেও মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গে দলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে বিজেপির এ বার ‘সম্মানজনক দ্বিতীয়’ হওয়ার লড়াই। সেই কারণেই এখানে মোদী-শাহ সময় না দিয়ে থাকতে পারেন। ফলে গত লোকসভা ভোটে তাঁর দল তৃণমূলের জন্য জয়ের লড়াই চালানো শুভেন্দুর কাছে এ বার তাঁর দল বিজেপিকে দ্বিতীয় করাই চ্যালেঞ্জ।
লোকসভা আসন তৃণমূলের দখলে। এই লোকসভার অন্তর্গত সঙ্গে ছ’টি বিধানসভা আসনেই ২০২১ সালে জয় পেয়েছে তৃণমূল। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের ফলাফল দিয়ে লোকসভা ভোটকে মাপা যায় না। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এবং তার পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট সে কথাই বলেছে। তাই বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বরং অনেকে বলছেন, এই আসন সেলিমের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ হতে পারে। জয়ের লক্ষ্যে মুর্শিদাবাদ আসনে লড়তে যাওয়া সেলিমকে মনে রাখতে হবে গত লোকসভা ভোটের ফলাফল। সেই ফলাফলে বাম-কংগ্রেস জোটের যৌথ প্রাপ্তি ছিল ৫,৫৮,৭২২ ভোট। সেখানে তৃণমূলের আবু তাহের খানের ভোট ছিল ৬,০৪,৩৪৬। সেলিমকে ভরসা দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। অধীরের কাছে চ্যালেঞ্জ জোটসঙ্গীর প্রধান রাজ্য নেতাকে জিতিয়ে আনা। মুর্শিদাবাদের লড়াই কঠিন।