নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
পয়লা বৈশাখে প্রকাশিত হল বিজেপির লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার। তবে বিজেপি বাংলা নববর্ষের দিন হিসাবে বাছেনি এই দিনটাকে। রবিবার অম্বেডকর জয়ন্তী মেনেই পদ্ম-শিবির ভোটের ইস্তাহারের দিন বেছেছে। বাঙালির পয়লা বৈশাখে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেলেও বাংলার কথা যে আলাদা করে ভাবা হয়েছে তার ছাপ রয়েছে বিজেপি সংকল্প পত্রে। যেটিকে বিজেপি ‘মোদীর গ্যারান্টি’ পত্র হিসাবেই তুলে ধরেছে। কারণ, পদ্মের এ বারের ইস্তাহারের নামই দেওয়া হয়েছে— ‘বিজেপির সঙ্কল্প মোদীর গ্যারান্টি।’
সেই গ্যারান্টি পত্রে আলাদা করে বাংলার জন্য কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। তবে এমন কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে যার সঙ্গে এই রাজ্যের যোগ গভীর। আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিনামূল্যে রেশনের সুবিধা তো বাংলার মানুষ পাবেনই সেই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বুলেট ট্রেন চালানোর যে ঘোষণা রয়েছে তাতে পূর্ব ভারতের কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়েছ। পূর্ব ভারতে বুলেট ট্রেন চালানোর কথা বলা হয়েছে। ইস্তাহার প্রকাশের সময়ে মোদী বলেছেন, “বন্দে ভারত স্লিপার, বন্দে ভারত চেয়ারকার এবং বন্দে ভারত মেট্রো দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে দেবে বিজেপি।” আমদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেনের কাজও পূর্ণ উদ্যমে চলছে বলে জানান তিনি। রবিবার দেশবাসীর উদ্দেশে মোদীর ‘গ্যারান্টি’, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব ভারতে একটি করে বুলেট ট্রেন চলবে। তার সমীক্ষার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, রেল সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, হাওড়া থেকে বারাণসী বুলেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আগেই করে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
আবার মৎস্যজীবীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিজেপি ইস্তাহারে। প্রসঙ্গত, গত রাজ্য বাজেটে বাংলার মৎস্যজীবীদের বাড়তি সুবিধার ঘোষণা করে তৃণমূল সরকার। রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বড় অংশের মানুষ মৎস্যজীবী। তাঁদের জন্য বাজেটে ‘সমুদ্রসাথী’ প্রকল্পের ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেই প্রকল্পে বর্ষার দু’মাস ভাতা বাবদ মৎসজীবীদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বরাদ্দ করা হবে ২০০ কোটি টাকা। উপকৃত হবেন দু’লক্ষ মৎস্যজীবী। তেমন করে আর্থিক সাহায্যের কথা না বলা হলেও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সুযোগ, সুবিধার পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনে আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় যত বার প্রধানমন্ত্রী প্রচারে আসছেন তত বারই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কথা বলেছেন। বিজেপিও প্রচারে উল্লেখ করছে সেই কথা। বিজেপির জাতীয় ইস্তাহারে বাংলার কথা বলা না হলেও সেই দুর্নীতি নিয়ে কড়া অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। রবিবার নিজের কথায়, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। বিজেপির ইস্তাহারেও দেশে নিয়োগ দুর্নীতি রুখতে কঠোর আইন আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকরের কথা বলেছিল। ভোট ঘোষণার আগে আগেই তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এনআরসি চালু হয়নি। যদিও বিজেপি তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে সেটা হতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল। এমন আশঙ্কার কথা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা গিয়েছে। এ বারের সঙ্কল্প পত্রে অবশ্য এনআরসি কার্যকরের সঙ্কল্প নেই বিজেপির পক্ষে। প্রসঙ্গত, এ বার বাংলার দিকে বিজেপির বাড়তি নজর রয়েছেই। মোট আসন সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে বিজেপি।