মাল বাজারে শুভেন্দুর সভায় বিমল গুরুং। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।
শুভেন্দু অধিকারীর মঞ্চে উঠলেন বিমল গুরুং। আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি তথা কুমারগ্রাম বিধানসভার গত নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী লেওস কুজুর ওই মঞ্চেই শুভেন্দুর হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নিলেন। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্য তথা প্রাক্তন ‘মেন্টর’ অমরনাথ ঝা-ও ওই মঞ্চেই যোগ দিলেন বিজেপিতে। তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে থাকলেন সন্দেশখালির কয়েক জন মহিলা। বুধবার মালবাজার শহরে বিজেপির সভামঞ্চ এ ভাবেই ঘটনাবহুল হয়ে উঠল।
এ দিন শুভেন্দুর সভা শুরু হয় দুপুর আড়াইটার পরে। সেই সময়ই সবাইকে চমকে দিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গেই মঞ্চে উঠলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। শুভেন্দুর সঙ্গে বিমলকে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তখন অনেকের যেন ঘোর কাটছে না। তার একটু পরেই শুভেন্দু ডেকে নিলেন লেওস কুজুর ও অমরনাথ ঝা-কে। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল বিজেপির দলীয় পতাকা। চমকের এখানেও শেষ নেই। সাতশো কিলোমিটার দূরের সন্দেশখালির মহিলাদের কয়েক জনকে এর পরে ডেকে নেওয়া হয় ওই মঞ্চে। তাঁদের এক জন বক্তৃতাও দেন। আর বিমল বললেন, ‘‘রাজনীতিতে সবই সম্ভব। আমরা এখন বিজেপিকে সব আসনেই সমর্থন করছি।’’
এ দিন শুভেন্দু চা বাগান প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চা বাগানের শ্রমিকদের জমির পাট্টা দিচ্ছেন। আমরা ক্ষমতায় এসেই চা বাগানের শ্রমিকদের জমির মালিকানার কাগজ দিয়ে দেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই জমিতে বাড়ি বানাবার জন্য যে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা জোড় গলায় তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) ঘোষণা করে দিচ্ছেন, সে টাকা আসলে কেন্দ্রীয় শ্রমকল্যাণ দফতর থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ প্রায় একই কথা এ দিন পরে রাজগঞ্জেও বলেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘চা বাগানের শ্রমিকদের বেতন নেই। অসমে চা শ্রমিকেরা সাড়ে তিনশো টাকা করে মজুরি পান। এখানে পান না। একটার পর একটা বাগান বন্ধ। এর আগে চাঁদমণি চা বাগান হর্ষ নেওটিয়াকে তুলে দিয়েছিলেন সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য।’’
মালবাজারে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গোপকে নিশানা করেন শুভেন্দু। ওই তৃণমূল নেত্রীর এক ভাই ডুয়ার্সের বালি-পাথর চুরি করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মালবাজার পুরসভার ঠিকাদাররা টাকা না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।’’ শুভেন্দুর অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়েছেন মহুয়াও।
এ দিন মালবাজারের সভায় লেওস ও অমরনাথের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতা দুলাল দেবনাথ জানান, অমরনাথ ও লেওসের দলবদলে তাঁদের সংগঠনের কিছুই ‘যাবে আসবে না’। প্রসঙ্গত, লেওস আগে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ করতেন। ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে কুমারগ্রামে বিধানসভায় প্রার্থী হন। তৃণমূলের জেমস কুজুরের কাছে হারেন। ২০২০ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। এখন অবশ্য তাঁর দাবি, সেই সময় মামলার ভয় দেখিয়ে তাঁকে দলে নিয়েছিল তৃণমূল। ২০২১ সালে তৃণমূল তাঁকে প্রার্থী করে কুমারগ্রামে, জেমসের জায়গায়। তাঁকে হারান বিজেপির মনোজ ওরাওঁ। বিধানসভা ভোটের পরে ওঁকে আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকে সভাপতি করা হয়। কয়েক মাস পরে তাঁর পদ চলে যায়। লেওসের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল আমার রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করে দিতে চাইছে।’’ তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘এর কোনও প্রভাব দলে পড়বে না।’’
(তথ্য সহায়তা: অনির্বাণ রায় ও পার্থ চক্রবর্তী)