গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র এবং প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অপসারণে সায় রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। বুধবার শাস্তি ঘোষণার পরেও কুণাল যে ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দাগা জারি রেখেছেন, তার প্রেক্ষিতে এমনটাই বলছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। দলের এক শীর্ষনেতা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেই লেটারহেডে ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। অর্থাৎ, এটা দলনেত্রীর অগোচরে হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, ওই ঠিকানাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির। সেই বাড়িরই লাগোয়া তৃণমূলের একটি দফতর রয়েছে।
অর্থাৎ, কুণালের শাস্তির বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর অনুমোদন রয়েছে। ওই সিদ্ধান্তে অনুমোদন রয়েছে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। কারণ, দলীয় সূত্রের খবর, কুণাল সংক্রান্ত প্রেস বিবৃতিটি দলের সাংসদদের পাঠানো হয়েছে অভিষেকের তরফেই। ওই বিবৃতিতে সই রয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলে কাকে কী পদ দেওয়া হবে বা হবে না অথবা কাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে, কাকে দলীয় পদে উন্নীত করা হবে, সেই সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্তই নেন মমতা এবং অভিষেক। কুণালের হিতৈষীদের একাংশের দাবি, মমতা এবং অভিষেক ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু জানতেন না। তৃণমূল সূত্রে সেই সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ডেরেক কেবল নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করেছেন। তাই কুণাল যে ভাবে রাজ্যসভার দলনেতাকে ‘পিওন’, ‘কুইজ়মাস্টার’ ইত্যাদি বলে লাগাতার আক্রমণ করছেন, তা দল সুনজরে দেখছে না। ডেরেক নিজে ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন। তাঁকে পাঠানো বার্তার জবাব মেলেনি। ফোনেও তিনি সাড়া দেননি।
দলের এক প্রথম সারির নেতা বৃহস্পতিবার ডেরেকের ওই বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বর্তমানে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তিনটি নথিভুক্ত ঠিকানা রয়েছে। একটি নয়াদিল্লি অফিসের, দ্বিতীয়টি কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে। তবে প্রধান কার্যালয় হিসাবে এখনও তৃণমূল নেতৃত্ব ব্যবহার করেন মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির ঠিকানাই। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সেই ঠিকানাই তৃণমূলের শিকড়। কুণালকে পদ থেকে সরানোর যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানা থেকেই।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘কুণাল বিবৃতির লেটারহেডে কোন ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখলেই বিষয়টি বুঝতে পারতেন। তা হলে তিনি আর সর্বভারতীয় তৃণমূল নেতৃত্বের ওই বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন না।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার উত্তর কলকাতার একটি রক্তদান শিবিরে গিয়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে ঢালাও প্রশংসা করেন কুণাল। তাপসের সঙ্গে একই মঞ্চেও ছিলেন তিনি। দলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভোটের সময় ওই ভাবে ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে প্রধান প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ঘোষণা করে কুণাল ঠিক করেননি। তবে কুণালের বক্তব্য, ওই রক্তদান শিবিরে তিনি গিয়েছিলেন একেবারেই ঘটনাচক্রে। সেই শিবিরে তৃণমূলের স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। কুণালের মতে, তিনি সেখানে স্পষ্টই বলেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃণমূলের ঘোষিত প্রার্থী। তিনি সুদীপের হয়েই ভোটে কাজ করবেন। তার পরেই দ্রুত পরিস্থিতি ঘোরালো হতে শুরু করে।
দলীয় বিবৃতিতে জানানো হয়, কুণালকে আগেই মুখপাত্রের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, কুণাল নিজেই মুখপাত্রের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেটি গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে তার পরেও কুণালকে দলীয় মুখপাত্রদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি প্রায় রোজই সংবাদমাধ্যণে বিভিন্ন রকমের বিবৃতি দিয়েছেন। এমনকি, তৃণমূল ভবনে বসেও ‘মুখপাত্র’ হিসেবে বিবৃতি দিয়েছেন। তখন তা নিয়ে দলের তরফে কিছু বলা হয়নি। তবে বুধবারের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কুণালকে আগেই মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হয়েছিল। এ বার তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও সরানো হল। সেই বিবৃতিতেই বলা হয়েছে, কুণালের বক্তব্যকে ‘দলের বক্তব্য’ হিসেবে যএন ধরা না হয়। কোনও সংবাদমাধ্যম যদি তা করে, তা হলে তাদের আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।