কুণাল ঘোষ। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ঘোষের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কৌতূহল একটাই, কুণাল যা লিখেছেন, তা কার উদ্দেশে? নিশানায় কে?
শুক্রবার কুণাল তাঁর এক (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দলবদল সমর্থনের। বিশ্বাসঘাতকদের আচরণ সমর্থনের। বিশ্বাসঘাতকেরা আমাদের দলের নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করলেও তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আদিখ্যেতা করে নিজের ইমেজকে সর্বপন্থী উদার রাখার চেষ্টার নাম সৌজন্য। আর বিশ্বাসঘাতক দলবদলুদের ‘গদ্দার’ বলা হলে সেটা আপত্তির!’
কুণাল তাঁর পোস্টে কারও নাম করেননি। তবে তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, কুণাল সম্ভবত অভিনেতা তথা ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবকে নিশানা করতে চেয়েছেন। কারণ, একটি সাক্ষাৎকারে দেব বলেছেন, অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী তাঁর পিতৃতুল্য। তাঁর সম্পর্কে ‘গদ্দার’ বলা হলে তাঁর আপত্তি রয়েছে বলে দেব মন্তব্য করেছেন। শুধু তা-ই নয়, মিঠুনের কিডনির প্রয়োজন হলে দেব নিজের কিডনি দিয়ে দিতেও পিছপা হবেন না বলে জানিয়েছেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কুণালের এই পোস্ট।
ঘটনাচক্রে, কুণাল শুক্রবার দুপুরে যে সময়ে পোস্টটি করেছেন, সেই সময়েই ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত পিংলায় দেবের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে তাঁকে ‘গদ্দার’ বলেন মমতা থেকে তৃণমূলের সব নেতা। কয়েক দিন আগে মিঠুনকেও ‘গদ্দার’ শব্দেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তার পরেই দেবের মিঠুন সংক্রান্ত বক্তব্য এবং কুণালের পোস্ট। তবে দেব একইসঙ্গে বলেছেন, যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারে এসে ‘‘দিদি! ও দিদি!’’ বলতেন, তা-ও তাঁর কাছে আপত্তিকর বলে মনে হয়েছিল।
কিছুকাল আগে দেবের ছবি ‘প্রজাপতি’ মুক্তি পেয়েছিল। সেখানে অভিনয় করেছেন মিঠুন। সেই ছবি নন্দনে প্রদর্শিত হতে বাধা পাওয়া নিয়ে আলোড়িত হয়েছিল তামাম তৃণমূল এবং টলিপাড়া। সেই সময়েও আসরে নেমেছিলেন কুণাল। শাসকদলের অন্দরে অনেকে বলেন, দেব যে ভাবে লোকসভা ভোটের আগে রাজনীতি থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন, তার নেপথ্যে ছিল ‘নন্দনকাণ্ড’। যদিও দেব প্রকাশ্যে কোথাও তেমন কিছু বলেননি। এখন দেখার, দলের রাজ্য সম্পাদক কুণালের ওই পোসট নিয়ে কিছু বলেন কি না ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী।
একদা মিঠুন ছিলেন অধুনাপ্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ঘনিষ্ঠ’। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে ‘জ্যোতি আঙ্কল’ বলতেন মিঠুন। পরবর্তীকালে মমতা ক্ষমতায় আসার পর মিঠুন তৃণমূলে যোগ দেন এবং রাজ্যসভার সাংসদ হন। কিন্তু চিটফান্ড দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় মিঠুনের। তার পরেই দেখা যায় তিনি মেয়াদ শেষের আগে রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। মাঝে কয়েক বছর রাজনীতির বাইরেই ছিলেন মিঠুন। তবে ২০২১ সালের ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। সেই মিঠুন সম্পর্কেই লোকসভা ভোটের প্রচারে ‘বড় গদ্দার’ বলেছিলেন তাঁর প্রাক্তন দলনেত্রী মমতা।