—প্রতীকী ছবি।
সন্দেশখালির কারণে কাল, সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটির উপর কমিশনের বাড়তি নজরে যে থাকবে, তা নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলেন অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্তারা। সূত্রের খবর, ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলায় অতিরিক্ত নজর দিতে বাড়তি ছ’জন পুলিশ-কর্তাকে সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
শুধু সন্দেশখালিই নয়, কয়েকজন পুলিশ-কর্তাদের নজরদারির বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে বারুইপুরেও পাঠাচ্ছে কমিশন। আগামিকাল, শনিবার ওই দফায় ভোট হবে দমদম, বারাসত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে।
নির্বাচন কমিশন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেছে সপ্তম দফার নির্বাচনের দিন। ওই দিন সওকাত নিজের বিধানসভা এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় যেতে পারবেন না বলে কমিশন জানিয়েছে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ-কর্তারা পৌঁছে গিয়েছেন। বসিরহাট পুলিশ জেলায় সকালেই পাঠানো হয়েছে ডিআইজি (নিরাপত্তা) আভারু রবীন্দ্রনাথ, ডিআইজি (রায়গঞ্জ রেঞ্জ) সুধীর কুমার নীলাকান্তম, রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের অন্যতম কম্যান্ডান্ট রাকেশ সিংহ, পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নিখিল আগরওয়াল, পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাহুল পাণ্ডে, রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেপুটি পুলিশ সুপার দেবরাজ ঘোষকে। সংশ্লিষ্টরা প্রত্যেকেই ১ মে পর্যন্ত ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখবেন।
এ দিন সকালেই বারুইপুর পুলিশ জেলায় একই দায়িত্বে পাঠানো হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ধ্রুব দাস এবং শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিশ্ব চাঁদ ঠাকুরকে। তাঁরাও ভোটের দিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকবেন। সিইও দফতর সূত্রের বক্তব্য, এই দায়িত্ব বণ্টনের কারণে রাজ্য সরকারের থেকে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল দিল্লির নির্বাচন সদনে। সেখান থেকে যে নামগুলিতে সবুজ সংকেত মিলিয়ে, দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদেরই।
কেন এমন পদক্ষেপ?
সিইও দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ওই ন’টি কেন্দ্র মিলিয়ে মোট বুথের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৭০। তার মধ্যে ৩৭৪৮টি বা ২১.৪৫% বুথ ক্রিটিকাল বা ঝুঁকিপূর্ণ। আবার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে যত বুথ রয়েছে, তার ৫৮.২৩ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। সন্দেশখালি-কাণ্ড এবং তার পরের ঘটনাপ্রবাহ যা চলেছে, তাতে ঝুঁকিপূর্ণ বুথের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে বলেই প্রশাসনিক মহলের দাবি। ভোটের আগে থেকে এবং ভোটের দিন যাতে কোনও ধরনের গোলমাল না হয়, তা ঠেকানোও এখন কমিশনের অন্যতম মাথাব্যথা। সেই কারণে বিপুল কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ মোতায়েনের পরেও অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বসিরহাট পুলিশ জেলায় ১১৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৩১২০ জন রাজ্য পুলিশ নিরাপত্তার কাজ করবেন। বারুইপুর পুলিশ জেলায় তা যথাক্রমে ১৬০ কোম্পানি এবং ৪৩৬৬ জন। সব মিলিয়ে ওই দফায় মোট ৯৬৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে মোতায়েন থাকবেন ৩৩ হাজার ২৯২ জন রাজ্য পুলিশ। এক কর্তার কথায়, “আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কমিশন যে কোনও ধরনের বিচ্যুতি বরদাস্ত করবে না, তা দিল্লির নির্বাচন সদন স্পষ্ট করে দিয়েছে। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক কর্তার উপর রয়েছে বাড়তি চাপ।”
এ দিন কমিশন লিখিত নির্দেশে জানিয়েছে, গণনার কাজে এজেন্ট হিসেবে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়োগ করতে পারবেন না কোনও প্রার্থী। সরকারি, সরকার পোষিত স্কুলগুলির ক্ষেত্রে এই বিধি কার্যকর থাকছে। তবে স্থায়ী বা অস্থায়ী, আলাদা করে এই বিভাজন আদেশনামায় উল্লেখ করেনি কমিশন। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, শুধু শিক্ষকেরাই নন, ভোটের এমন কাজে সরকারি কর্মচারীদের নিযুক্ত করা যায় না।