—প্রতীকী চিত্র।
দেগঙ্গা যার, বারাসত তার— গত তিনটি লোকসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে এই তথ্যই কার্যত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে, গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে দেগঙ্গায় শক্তি বাড়িয়েছে আইএসএফ। এ বার লোকসভা ভোটেও তাই এই কেন্দ্রে বাড়তি নজর সব পক্ষের। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে জোর তৎপরতা চলছে তৃণমূলে।
গত লোকসভা ভোটে দেগঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারের ‘লিড’ ছিল ৭৩ হাজারের বেশি। সে বার এক লক্ষের কিছু ভোটে বারাসত আসনে জিতেছিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত বাকি ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বাকিগুলিতে ‘লিড’ সামান্যই। ২০০৯ এবং ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনেও এখানে কাকলির ‘লিড’ ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দেগঙ্গায় তৃণমূল জিতলেও ‘লিড’ কমে হয় ৩২ হাজার ভোটের। প্রায় ৬৭ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল আইএসএফ।
এই কেন্দ্রে কি এ বার ‘লিড’ বাড়াতে পারবে তৃণমূল? তা সময়ই বলবে। তবে, শুক্রবার দলের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর নেতা আনিসুর রহমান বিদেশ এবং মফিদুল হক সাহাজি ওরফে মিন্টুকে নিয়ে কাকলির উপস্থিতিতে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। দলের অন্দরের খবর, দেগঙ্গায় গোষ্ঠীকোন্দলে প্রলেপ দিয়ে এখান থেকে বড়সড় ‘লিড’ রাখতে মরিয়া তৃণমূল।
তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমানের সঙ্গে মিন্টুর গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর সামনেই ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দু’দফায় হাতাহাতি হয়েছে দেগঙ্গায়। এখানকার কদম্বগাছিতেও তৃণমূলের কোন্দল সামনে এসেছে। ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে গেলে সেখানে কাকলির সামনে বিক্ষোভ দেখান কদম্বগাছি পঞ্চায়েতের বেশ কিছু সদস্য।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবারের বৈঠকের পরে বিদেশ বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লিড ধরে রাখার জন্য সব বিবাদ ভুলে দলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছি। দলের স্বার্থে সবই করতে হবে। তবে, ইদানীং মিন্টুর সঙ্গে কোনও বিবাদ ছিল না। কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সবই মিটেছে।’’ মিন্টুর কথায়, ‘‘প্রার্থীকে জেতাতে হবে। আগে কার সঙ্গে কী হয়েছিল, তা এখন মনেও নেই। বিজেপিকে হারাতে এক সঙ্গে নামার নির্দেশ এসেছে।’’
তবে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটলেও লড়াই যে সহজ হবে না, তা অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীই মানছেন। কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় হওয়ার পর থেকে দেগঙ্গায় আইএসএফের শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে এখানে ভাল ফল করে নওসাদ সিদ্দিকীর দল। বেশ কিছু আসনে জিতেছে তারা।
এ বার বারাসত কেন্দ্রে আইএসএফের প্রার্থী হয়েছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইএসএফ যে দেগঙ্গায় শক্তিশালী, তা প্রমাণ হয়েছে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তৃণমূল উন্নয়ন করতে পারেনি।’’ আইএসএফের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক কুতুবউদ্দিন পুরকাইত বলেন, ‘‘বিধানসভায় দ্বিতীয় হয়েছি। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দ্বিতীয়। পঞ্চায়েতে যাঁরা ভোট দিতে পারেননি, তাঁরা মুখিয়ে আছেন। এখানে জল, রাস্তা কর্মসংস্থান, শিক্ষা— সব কিছুর সমস্যা আছে।’’
রাজ্যে বামফ্রন্ট-আইএসএফের সমঝোতার চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়। সমঝোতা হলে যদি এই আসনে বামেরা প্রার্থী না দেয়, তা হলে আইএসএফ তাদেরও সমর্থন পাবে। কংগ্রেসও এখনও এখানে প্রার্থী দেয়নি। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থী তিন বারের জয়ী সাংসদ। কিন্তু দেগঙ্গার জন্য কী করেছেন? রাজ্য সরকারের টাকায় কর্মতীর্থ হয়েছিল। সেটি এখন ভুতুড়ে বাড়ির চেহারা নিয়েছে। এখানকার বহু মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক। দুষ্কৃতী নামিয়ে তৃণমূল ভোট করায়। তবে এ বার তৃণমূলের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। আমরা আমাদের পূর্ণ শক্তি দিয়ে এখানে লড়ব।’’
তৃণমূল প্রার্থী কাকলির দাবি, ‘‘যা উন্নয়ন হয়েছে, সেটা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে। সিপিএম কোনও উন্নয়ন করেনি। আইএসএফ ও বিজেপি হাত মিলিয়েছে। ষড়যন্ত্র করছে।’’
গত লোকসভা ভোটে বারাসত কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও সংখ্যালঘু প্রধান দেগঙ্গায় ততটা সুবিধা করতে পারেনি। বিধানসভা ভোটেও নয়। বিজেপির সংগঠন এখানে ততটা শক্তিশালী নয় বলে মনে করেন দলেরই অনেকে।
তবে, বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের দাবি, ‘‘বাংলায় বিকল্প বিজেপি। তৃণমূলের দুর্নীতি, অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। সংখ্যালঘু মানুষও বুঝে গিয়েছেন তৃণমূলের স্বরূপ। ফলে, তাঁরাও আমাদের সঙ্গে আছেন। নেতৃত্বের অভাবে আইএসএফ দেগঙ্গায় বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না।’’