—প্রতীকী চিত্র।
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে ভোটের আগের দিন রাতে তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল। আঙুল তোলা হচ্ছে সিপিএমের দিকে। তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ। তার পর তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় দুষ্কৃতীরা। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ভোটের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। এই খুনও সেই দ্বন্দ্বেরই অঙ্গ।
কেতুগ্রাম এলাকা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সেখাকার চেঁচুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু শেখ (৫০) রবিবার রাতে খুন হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাতে দলের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি বোমা ছোড়া হয়। বোমার ঘায়ে জখম হয়ে লুটিয়ে পড়েন মিন্টু। তার পর তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেশ কয়েক বার কোপানো হয়।
মৃতের স্ত্রী তুহিনা খাতুনের অভিযোগ, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের শিকার হয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে লোক দিয়ে খুন করানো হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে জড়িত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি-সহ অনেকেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে সিপিএমের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় সিপিএম নিজেরা জিততে পারবে না। সেই আক্রোশ থেকেই খুন করা হয়েছে তাঁদের দলের কর্মীকে। তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘মিন্টু আমাদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সিপিএমের হার্মাদবাহিনী বুঝে গিয়েছে, এ বারের ভোটে তারা ভাল ফল করতে পারবে না। সেই কারণেই মিন্টুকে খুন করা হয়েছে। এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও গল্প নেই। সিপিএমের তরফেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ করা হচ্ছে। তার কোনও ভিত্তি নেই।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘‘ওই এলাকায় আমাদের কর্মীরা তো ঘরছাড়া। তা ছাড়া, মৃতের স্ত্রী তো পরিষ্কার জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এই খুন। ওখানে ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গোলমাল রয়েছে। সেই কারণেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এখন নিজেদের বাঁচাতে সিপিএমের নামে দোষ দিচ্ছে।”
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক কর্মী খুন হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গ্রামে যাতে নতুন করে অশান্তি না হয়, তার জন্য গোটা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’
এই ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারও রয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জন কেতুগ্রাম থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর নাম ভুলন শেখ। এ ছাড়া, সামসুর শেখ নামের আরও এক জনকে আটক করা হয়েছে।’’
বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ সোমবার সকালে ভোট দিয়ে বেরিয়ে কেতুগ্রাম প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সিপিএমের হার্মাদবাহিনী এখন বিজেপির ছত্রছায়ায় এসে খুন, রাহাজানি করছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে আমি আবেদন করব যাতে তাঁরা তাঁদের মতামত ভোটবাক্সে দেন।”