Lok Sabha Election 2024

মমতার গ্যারান্টিই তৃণমূলের অস্ত্র, প্রচারে মন্ত্রী, সাংসদ থেকে সেনাপতি অভিষেকও

তৃণমূল সূত্রে দাবি, বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র তরফ থেকে এই গ্যারান্টি দেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছেন মমতা এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৯
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে নিজে মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে তৃণমূলের প্রচারের মধ্যমণি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার লোকসভা ভোটেও সেই মমতার প্রাসঙ্গিকতাকেই প্রচারের কেন্দ্রে রাখতে চাইছে তৃণমূল। আর তাই তাঁর নামে ‘গ্যারান্টি’র রাজনীতিকে আসন্ন ভোটে আগাগোড়া সামনে রাখবে দল। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এপ্রিল জুড়ে ‘মমতার গ্যারান্টি’র অন্তত ৩০টি পর্বকে সামনে রেখে প্রচার করবেন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া যাবতীয় গ্যারান্টি যে অন্তঃসারশূন্য, তার ব্যাখ্যাও বিজেপি-বিরোধী প্রচারে আনার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এ বার ভোটে এই ‘গ্যারান্টির রাজনীতি’ আমদানি করেছেন খোদ মোদী, গত কয়েক মাস ধরে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং লক্ষ্যপূরণকে তিনি নিজের নামের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ‘মোদীর গ্যারান্টি’ বলে প্রচার করেছেন। সেই সঙ্গে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের কিছু ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করে তিনি তা পূরণ করার কথাও বলছেন। হালে জনসভায় তাঁর সবচেয়ে হাততালি কুড়িয়ে নেওয়া সংলাপ, “মোদীর সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি হল, গ্যারান্টি পূর্ণ হওয়ার গ্যারান্টি।”

ঠিক এই জায়গাটিকেই নিশানা করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, বাংলার প্রচারে। গত ১০ তারিখে জনগর্জন সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ‘দিদির গ্যারান্টি’র প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁরা কার গ্যারান্টি বিশ্বাস করেন— ‘দিদি’ না মোদী? রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের রাজনীতিতে এই গ্যারান্টির প্রচার এক নতুন অস্ত্র, যা চব্বিশের লোকসভা ভোটে দল মূল থিম করতে চাইছে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে দাবি, বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র তরফ থেকে এই গ্যারান্টি দেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছেন মমতা এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল তাঁর বর্তমান পরিস্থিতি সামলে কতটা উন্নয়ন এবং সুশাসনের গ্যারান্টি দিতে পারবেন, তা-ও দেখতে চাইছে তৃণমূল। মমতা তাঁর গত তেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণের গ্যারান্টিকেই এপ্রিলে প্রচারে আনা হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মানুষ যখন ভোটের দিন বোতাম টিপবেন, তাঁদের মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনের কথাই যেন মাথায় থাকে, তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। ভোট হবে লোকসভারই, কিন্তু ভোটদানের ‘স্পিরিট’ থাকবে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার।” রাজ্যের মন্ত্রীরাও নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের সামনে এই গ্যারান্টির পর্বগুলি তুলে ধরবেন। জনসভায় সরব হবেন অভিষেকও।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ‘দিদির গ্যারান্টি’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কী ভাবে গ্যারান্টি দিচ্ছে? তাদের নিজেদেরই ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গিয়ে, এক্সপায়ারি ডেট এসে গিয়েছে। যা পরিস্থিতি, তাতে লোকসভা ভোটের পরে বাংলার এই সরকারই ভেঙে যাবে। ছাব্বিশের আগেই। যাদের নিজেদের অস্তিত্বেরই ঠিক-ঠিকানা নেই, তারা এখন এসেছে গ্যারান্টি দিতে!”

তৃণমূল প্রচার করবে যে, মমতা কৃষকদের উপার্জন তিনগুণ করেছেন, সেখানে মোদী দ্বিগুণ করার গ্যারান্টি দিয়ে ব্যর্থ। দু’কোটি মহিলা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র সুবিধা পেয়েছেন, অথচ কেন্দ্রের ‘বেটি বচাও’ প্রকল্পের তহবিলের ৮০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে বিজ্ঞাপনে। একশো দিনের কাজে ৫৯ লক্ষ শ্রমিকের বকেয়া মজুরি রাজ্যের তাহবিল থেকে মেটানোর কথা তুলে ধরা হবে। আরও জোরালো ভাবে প্রচার করা হবে কী ভাবে রাজ্যের ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। উল্টো দিকে, মোদীর ‘শূন্য গ্যারান্টি’র বর্ণনা দিতে গিয়ে চড়া বেকারত্ব, স্মার্ট সিটি মিশনের ব্যর্থতা, নমামি গঙ্গে, সাগরমালা যোজনায় কাজ না হওয়ার কথা তুলে ধরা হবে। বিজেপি শিবিরের যদিও দাবি, রাজ্যে শিল্প না হওয়া, বিপুল দুর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগের কথাই মানুষ শুনবেন।

অবশ্য তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মোদীর গ্যারান্টি যে অন্তঃসারশূন্য, সেটা প্রমাণ করলেই ফল পাওয়া যাবে। কারণ বিজেপির অধিকাংশ প্রার্থীই লড়বেন মোদীর নামে।” তৃণমূল মনে করছে, রামমন্দির নির্মাণের আবেগ উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে পড়লেও, বাংলায় তার ঢেউ উঠবে না। মন্দিরের ফল রাজ্যেও পাওয়ার বিষয়ে বিজেপি আশাবাদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement