মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ জয় হয়নি। লোকসভায় তাই এ বার ‘মর্যাদার লড়াই’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাবাড়ি, বীরভূমের কুসুম্বা গ্রামে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজ্যে তথা জেলায় ‘আধিপত্য’ থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর মামাবাড়ির গ্রাম কুসুম্বা কেন তৃণমূলের প্রতি বিমুখ সেই প্রশ্ন নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের মুখে দলে চর্চা হচ্ছে। দল সূত্রে দাবি, ‘মুখ্যমন্ত্রীর মানসম্মান রক্ষায়’ কুসুম্বা এলাকায় ভোট পুনরুদ্ধার করতে হবে বলে দলীয় কর্মীদের প্রতি বার্তা দিচ্ছেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
রামপুরহাটের কুসুম্বা গ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাবাড়ি। কুসুম্বার অদূরে চাকাইপুর গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক ভিটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুসুম্বা গ্রামের আত্মিক যোগাযোগের বিষয়টি খোদ মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে একাধিকবার প্রশাসনিক বৈঠকে এবং বিভিন্ন ভোটের প্রচারে বলে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর মামাবাড়ি ও পৈতৃক বাড়ি হওয়ার জন্য বীরভূম জেলা পরিষদ ও তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ থেকে কুসুম্বা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে কুসুম্বা গ্রামের প্রতি আলাদা নজরও আছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে কুসুম্বা গ্রামে দাদুর সঙ্গে দেখা করে যান তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকও গ্রামের রাস্তাঘাট, গ্রামের হাইস্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীতকরণ-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচির প্রশংসা করে যান।
তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা যায়, কুসুম্বা গ্রামের তিনটি আসনের মধ্যে দু’টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করলেও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই, দলের রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি নীহার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী পম্পা।
বস্তুত, জেলার ভোটে তৃণমূলের এই কুসুম্বা-কাঁটা নতুন নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বীরভূম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় জয়ী হলেও কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির কাছে তিন হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান কমলেও জয় আসেনি। পাঁচ বারের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হলেও কুসুম্বা পঞ্চায়েত এলাকায় দু’হাজারের বেশি ভোটে বিজেপির কাছে তৃণমূল হারে। পঞ্চায়েতেও কুসুম্বায় জয় না আসায় এ বার ‘মর্যাদার লড়াই’য়ে জিততে মরিয়া তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রে দাবি, কুসুম্বা উদ্ধার করার লক্ষ্যে তৃণমূল নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই একাধিক বার অঞ্চল ভিত্তিক বৈঠকে বসেছেন। দলের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত সমিতির আসন ভিত্তিক নির্বাচন কমিটি গঠন করে লোকসভা ভোট পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে দাবি, দলীয় কর্মীদের নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক বৈঠকে জেলা নেতৃত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশসূচক বার্তা দিয়ে সতর্কও করেছেন। প্রার্থী শতাব্দী রায়ও দলীয় কর্মীদের কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানসম্মান রক্ষায় লিড আনার বার্তা দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি।
বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এ বারের লোকসভা ভোটেও কুসুম্বা গ্রামে তাদের ‘লিড’ থাকবে। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ির সদস্যের নাম আছে। পঞ্চায়েতে সেই পরিবারের সদস্য তৃণমূলের প্রার্থী হন। মানুষ হারিয়ে যোগ্য জবাব দিয়েছে। লোকসভাতেও কুসুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের লিড থাকবেই।’’
বিজেপি, তৃণমূল দু’দলকেই বিঁধে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে লুটেরাদের রাজত্ব, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিজেপির কেন্দ্র সরকারের জনবিরোধী নীতি দেখে মানুষ এখন ঘৃণায় তৃণমূল-বিজেপি কী সেটা বুঝে নিয়েছে। লোকসভাতেও ওদের জবাব দেওয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুত।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি, মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ অন্য নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা এলাকার মানুষ পাচ্ছেন। আমরা আশা করব আমাদের ফল পঞ্চায়েত নির্বাচনের থেকে আরও ভাল হবে।’’