Loksabha Election 2024

তৃণমূলের তারকা প্রচারক তালিকা থেকে বাদ রাজ্য সভাপতি সুব্রতের নাম, দলের অন্দরে জল্পনা

প্রথম দু’দফার ভোটে তৃণমূলের তারকা প্রচারকদের তালিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই সুব্রত বক্সীর নাম ছিল। তৃতীয় দফার ভোটের জন্য সেই তালিকায় সুব্রতের নাম ছিল না। নেই চতুর্থতেও।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৬
Share:

তৃণমূলের তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে নাম বাদ রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। ফাইল ছবি।

লোকসভা ভোটের তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ গেল তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নাম। বুধবার সর্বভারতীয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে চতুর্থ দফার ভোটে তারকা প্রচারকদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। নাম রয়েছে মোট ৪০ জনের। সেই তালিকায় নাম নেই সুব্রতের।

Advertisement

প্রথম দু’দফার ভোটের যে তালিকা নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছিল, তাতে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই রাজ্য সভাপতির নামের উল্লেখ ছিল। গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফার ভোটের তারকা প্রচারকদের তালিকায় সুব্রতের নাম ছিল না। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। বুধবার দেওয়া চতুর্থ তালিকাতেও তার পুনরাবৃত্তি। এমন ঘটনায় জল্পনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই। কারণ, গত বছর কালীঘাটের এক ঘরোয়া বৈঠকে রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়ে মমতার কাছে আবেদন করেছিলেন তৃণমূলের ‘বক্সীদা’। দলের আগামী সভাপতি হিসেবে অভিষেকের নামও প্রস্তাব করেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজ্য সভাপতির সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন মমতা। তার পর আর দলের কোনও স্তরেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।

লোকসভা ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দলের রাজ্য সভাপতির নাম তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে দলের অন্তরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। সুব্রত ৮০-র দশক থেকে মমতার সঙ্গী। ১৯৯৮ সালে যখন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গঠন করেন মমতা, তখন নিজের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে পূর্ণ সময়ের জন্য রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি। ১ জানুয়ারি ১৯৯৮ সাল থেকে তিনিই দলের রাজ্য সভাপতি। দলে অনেকের উত্থান-পতন হলেও, বক্সী রয়ে গিয়েছেন স্বপদেই। মাঝে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত সভাপতির সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। মুকুল রায়ের সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হলে তাঁর পদ বক্সীকেই দিয়েছিলেন মমতা। পরবর্তী কালে অবশ্য অভিষেকের জন্য সেই পদ ছাড়তে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি বক্সী। এ ছাড়াও, দলের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করা কিংবা অযথা বিতর্ক তৈরি করেও দলনেত্রীকে কখনও বিড়ম্বনায় ফেলেননি তিনি। এমন এক জন বিশ্বস্ত সৈনিক কী ভাবে তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কারণ, তৃণমূলের রাজনীতিতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বলে পরিচিত ছিলেন বক্সী, মুকুল ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুকুল-পার্থ রাজ্য রাজনীতির অন্তরালে চলে গেলেও, বক্সী এখনও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বে সামিল। এখনও তৃণমূলের কর্মী মহলে শোনা যায়, ‘বক্সীদা আমাদের পার্টির ভীষ্ম পিতামহ’।

Advertisement

কিন্তু কেন বাদ পড়ল তাঁর নাম? স্বয়ং বক্সী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, ‘‘আমি নিজেই দলকে বলেছি আমার নাম তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। কারণ আমি তো আর সব জায়গায় প্রচারে যেতে পারছি না। তাই নাম বাদ দিতে বলেছি।’’ মুখে এমন বললেও, ভোটের সময় দলের প্রয়োজনে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে যাতায়াত করছেন তিনি। বক্সীর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, আরামবাগ ও বনগাঁ লোকসভা নিয়ে বেশ পরিশ্রম করছেন তিনি। ফোনে রাজ্যের সর্বত্রই নির্দেশ দিচ্ছেন। আর সুযোগ পেলেই প্রচারে আরামবাগ বা বনগাঁ যাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বহু আগে থেকেই তৃণমূলনেত্রীকে রাজ্য সভাপতি জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আর ভোটের লড়াই করতে চান না। তখন তিনি দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার সদস্য ছিলেন। সুব্রত ভোটে লড়াই করতে না চাইলে তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন মমতা। আর এ বার তাঁর নাম তারকা প্রচারকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধও মেনে নিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও, ২০২০ সালে সুব্রতকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন মমতাই। আর রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়তে চাইলেও তাঁকে দায়িত্ব ছাড়তে দেননি সেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীই। ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হবে বক্সীর রাজ্যসভার মেয়াদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement