অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
অভিষেক বলেন, ‘‘২০০৩ সালে ডোমকলে পঞ্চায়েত ভোটে কত মানুষ মারা গিয়েছেন! সিপিএমের হার্মাদেরা করেছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল জেতার পর আর কালো দিন ফেরেনি।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘কেন্দ্র টাকা দিক বা না দিক, প্রকল্পের বকেয়া টাকা বাংলার মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিরোধীদের দম্ভ চূর্ণ করে মা, মাটি, মানুষের প্রার্থী, সংসদে গিয়ে যিনি মানুষের কণ্ঠস্বর হয়েছেন, তাঁকে চার নম্বর বোতাম টিপে ভোট দিন। বিরোধীদের বাংলাছাড়া করুন। আপনি এখানে বোতাম টিপবেন, ভূমিকম্প হবে দিল্লিতে। আগে জয় বাংলা বললে বলত, বাংলাদেশি। এখন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিও বলছেন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘কথায় কথায় মামলা করে এরা। আমার বিরুদ্ধে করুক। রামপুরহাটেই এক মঞ্চে আসুক। গত ১০ বছরে তোমার সরকার কী করেছে আর আমরা কী করেছি, পরিসংখ্যান দেব? পরিসংখ্যানের লড়াই হোক। শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। ’’
অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের ইডি, সিবিআই দেখিয়ে লাভ নেই। তিন মাস ধরে রাস্তায় রয়েছি। যিনি টাকা দেননি ১০০ দিনের কাজের, আবাসের, তাঁর গ্যারান্টি বীরভূমের মানুষ বিশ্বাস করবেন না।’’ তিনি এ-ও জানান, কেন আয়ুষ্মান ভারত বাংলায় করতে দেননি। এতে রাজ্য সরকারের টাকা বাঁচলেও সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়বে। কারণ হিসাবে অভিষেক জানান, বাড়িতে দু’চাকা, টিভি বা চার চাকা থাকলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না। স্বাস্থ্যসাথীতে সে রকম সমস্যা নেই।
অভিষেক বলেন, ‘‘তফসিলিদের উপর সব থেকে বেশি অত্যাচার করেছে বিজেপি সরকার। সব থেকে বেশি অত্যাচার হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এক বছরে ১৩ হাজার তফসিলির উপর আক্রমণ হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে তফসিলি ভাইয়ের উপর বিজেপি নেতা প্রস্রাব করছেন, ভিডিয়ো দেখেছেন। সেই যোগী আদিত্যনাথ সাত দিন আগে বীরভূমে এসে ভাষণ দিচ্ছেন। এখানে আসার আগে পড়াশোনা করবেন। যাঁর টিকি ধরে রাজনীতি করেন, সেই শাহের দফতর ‘এনসিআরবি’র রিপোর্ট বলেছে দেশের সব থেকে সুরক্ষিত শহর কলকাতা।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘১০ বছর মোদী সরকার ক্ষমতায়। গত ১০ বছরে বলুন, এখানে কারও জন্য কিছু করেছেন? একটা বাতিস্তম্ভ বা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন? এমনকি, গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। মানুষের উপার্জিত টাকা বন্ধ করে রাখছে। আমি কী খাব, পরব, প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘ভাল লোকেরা বিজেপি করেন না। পাড়ার চোর, চিটিংবাজেরা বিজেপি করেন। এদের মানসিকতা ভাবুন, শীতলখুচিকাণ্ডের নেপথ্যে যিনি, তাঁকে এখানে প্রার্থী করতে চেয়েছিল বিজেপি। বীরভূমে ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৬০ জন শ্রমিককে ১০০ দিনের বকেয়া কাজের টাকা দিয়েছে আমাদের সরকার। ৯ লক্ষ ১ হাজার ৯৩৭ জন মা, বোনকে প্রতি মাসে সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার দিচ্ছে। ১২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩২১ জনকে প্রায় ৫৪৫ কোটি খরচ করে কন্যাশ্রীতে সহযোগিতা করেছে। ৩৬ লক্ষ ৭৮ জনকে আমাদের সরকার রেশন দিচ্ছে বিনামূল্যে।’’
অভিষেক জানান, গত চার বছরে আবাসে ১০ পয়সাও দেয়নি বিজেপি। বাংলায় হারের পর এক টাকাও দেয়নি। দরকারে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক বলে দাবি অভিষেকের।
অভিষেক বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ২০১৯ সালে অমিত শাহের নেতৃত্বে কলকাতার রাজপথে ভাঙচুর করা হয়েছে। বাংলার মনীষীদের প্রতিনিয়ত অপমান করছে। বাংলার গরিব মানুষের অধিকারের টাকা আটকে রেখেছে। সে কারণে বিজেপি বাংলা-বিরোধী। তাই এঁদের বাংলা থেকে উৎখাত করতে হবে। রামপুরহাট বিধানসভা জয়ের ব্যবধানে যাতে এক নম্বর হয়, আপনারা সুনিশ্চিত করবেন। আমি কথা দিলাম, লক্ষ্মীর ভান্ডারে বন্ধ করতে পারবে না। আপনারা ভোট দিন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা অশালীন শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন। তিন মাস ধরে মমতাকে অপমান করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করেছে। রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি বীরভূম জেলায়, শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর ফলক থেকে তাঁর নাম মুছেছে জনবিরোধী মোদী সরকার। বদলে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সে কারণে এরা বাংলা বিরোধী। এরা রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করছে।’’
অভিষেক মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলেন। জানান, ভোট হলে আবার বৃদ্ধি পাবে রান্নার গ্যাসের দাম। তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষ খাবেন কী? জলের টাকা, রাস্তার টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ। যে ভাবে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন, আবার জয়ী করুন। প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলার স্বার্থ দেখেছেন, তেমনই করুন। আবার ভোট দিন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিতে ১৩ তারিখ রোদে পুড়ে হোক, বৃষ্টিতে ভিজে হোক, জোড়াফুলে ভোট দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করুন। শতাব্দী রায়কে জয়ী করুন। এঁরা আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘যাঁরা বাংলাকে অপমান করছেন, তাঁদের ভোট নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী সভা করে বলছেন, যাঁরা মাছ খান, তাঁরা দেশবিরোধী। আপনারা হাত তুলুন যাঁরা মাছ খান। দেখতে চাই, কত জন দেশবিরোধী? আপনাদের এ রকম আখ্যা দিচ্ছেন। আপনারা কি এক মত? যাঁরা বঙ্গবাসীর অপমান করেন, তাঁদের কি ভোট দেবেন? তাঁদের কি উচিত শিক্ষা দেবেন? যাঁরা টাকা আটকে রেখেছে, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না? বাংলার মায়েদের সম্ভ্রম যাঁরা বিক্রি করেছেন ২০০০ টাকায়, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘শীতলখুচিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের হাতে লাঠি ছিল না। ভোট দিতে গেছিলেন। যাঁদের নেতৃত্বে শীতলখুচিতে এই কাণ্ড হয়েছিল, তাঁকে বিজেপি এখানে প্রার্থী করতে চেয়েছিল। কমিশন প্রার্থীপদ বাতিল করে। এখন ডামি প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। গত ১০ বছরে বিজেপির কেউ এসে কোনও খবর নিয়েছে? কোভিডের সময় সকলে ঠিক রয়েছেন কি না, জিজ্ঞেস করেছে? অন্য দিকে, মমতার সরকার প্রতি দু’মাস অন্তর দুয়ারে সরকার প্রকল্পে সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বলেছিল, এসএসসি নিয়ে বোম ফেলব। তৃণমূল বেসামাল হবে। মানুষের চাকরি খাওয়ার যে ষড়যন্ত্র, সেই বেলুনে আলপিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্ট যে অর্ডার দিয়েছিল, ২৫ হাজার জনের চাকরি বাতিল, তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা মনে করি, এখনও বিচারব্যবস্থায় মেরুদণ্ড সোজা রাখা লোকজন রয়েছেন বলেই দেশটা বেঁচে রয়েছে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ২০০০ টাকা করে সন্দেশখালিতে কয়েক জন মহিলাকে দিয়েছে। তৃণমূলকে ছোট করবে বলে নয়, বাংলাকে ছোট করবে বলে করেছে এ সব। বাংলার ১০ কোটি মানুষকে অপমান করেছে।’’
অভিষেক বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন কুস্তিগিরদের প্রতিবাদের প্রসঙ্গও। সাক্ষী সিংহের প্রতিবাদের কথা বলেন তিনি। জানান, যাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, শ্লীলতাহানির অভিযোগ, সেই বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ সিংহের ছেলেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
অভিষেক বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা সামনে আসার পর যেখানে পথসভা করে মায়েরা গর্জে উঠেছিলেন, সন্দেশখালির অপমান মানব না, সেই রাস্তায় বুধবার বিজেপির এক নেতা যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন, আপনারা দেখেছেন। যাঁরা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলেন, তাঁদের দেখুন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বসিরহাটে বিজেপির যে প্রার্থী, সেই রেখা পাত্রের একটা ভিডিয়ো জনসমক্ষে এসেছে। সেখানে বলছেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের না নিয়ে যাঁদের নিয়ে গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে এর যোগাযোগ নেই। বিজেপির যে প্রার্থী, যাঁর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, গঙ্গাধর কয়াল জানিয়েছেন, সেই রেখা ২০০০ টাকা নিয়ে মিথ্যে মামলা করেছেন। বিজেপি যাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমি বলছি না।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, এখানে ধর্ষণ করা হয়নি। ইচ্ছা করে ২০০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা হয়েছে। গোটা দেশের কাছে ক’টা ভোটের জন্য বাংলার মানুষকে ছোট করেছে বিজেপি।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘গত তিন-চার মাস ধরে বাংলাকে কলুষিত করার যে পরিকল্পনা, এটা জনসমক্ষে চলে এসেছে। সন্দেশখালির যে বেলুন, তাতে আলপিন ফুটেছে। যাঁরা গলা ফাটাতেন, মিথ্যে খবর তৈরি করে বাংলাকে নির্লজ্জ ভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের চক্রান্ত এখন জনসমক্ষে। বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ এসেছে।’’