(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী, নন্দীগ্রামের বিধায়ক শেখ সুফিয়ান, নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা (ডান দিকে), সোনাচূড়ায় অশান্তি (পিছনে)। — গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে আগুন জ্বলল নন্দীগ্রামে। গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ, আগুন— জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে ফিরল পুরনো ছবি। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের মহিলা কর্মী রথিবালা আড়িকে কুপিয়ে খুন করেছে। বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের পাল্টা দাবি, নন্দীগ্রামে পিছিয়ে পড়ার ভয়েই স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী অশান্তি করাচ্ছেন। বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই রথিবালা খুন হয়েছেন বলেও দাবি সুফিয়ানের।
রাতপাহারা দেওয়ার সময় সোনাচূড়ায় খুন হয়েছেন বিজেপির মহিলা কর্মী রথিবালা। তার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত নন্দীগ্রামে। প্রতিবাদে বন্ধ ডাকে বিজেপি। সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেছে বিজেপি। সোনাচূড়ার মনসাপুকুর বাজারে পথ অবরোধ করেন পদ্মশিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা। ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয় কয়েকটি দোকানে। পুলিশ বার বার অবরোধ তোলার আবেদন জানালেও কাজের কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত, লাঠি চালিয়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের সরিয়ে দেয় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী।
অন্য দিকে, এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর চরমে উঠেছে। গোলমালের দায় বিজেপি চাপিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। স্থানীয় বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মিটিং করতে এসে প্ররোচনামূলক কথা বলেছিলেন। তার ফলস্বরূপ, গতকাল রাত প্রায় ২টো নাগাদ সোনাচূড়ার এক জন তৃণমূল সভাপতির নেতৃত্বে ৫০ জনের বাইক বাহিনী ওখানে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে। রথিবালা আড়ির মৃত্যু হয়েছে। ছেলে সঞ্জয় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। তার প্রতিবাদে নন্দীগ্রামে রাস্তা অবরোধ এবং বন্ধ হচ্ছে।’’
যদিও অভিষেকের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। পাল্টা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি বলছেন, ‘‘অভিষেক কোনও প্ররোচনা দেননি। তিনি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেছেন।’’ সুফিয়ান দায় চাপিয়েছেন শুভেন্দুর উপর। সুফিয়ান বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী জানেন যে, নন্দীগ্রামে ডেফিসিট খাব, তাই একটা শেষ পেরেক মারতে হবে। যে মনসাবাজারে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে তৃণমূলের একটি ঝান্ডাও নেই। তবে কিছু সমর্থক আমাদের ওখানে থাকেন। ওরা (বিজেপি) রাত ১২টার পর গিয়ে আমাদের তৃণমূলের লোকেদের বাড়ি ভাঙচুর করে, মারধর করে। তা নিয়েই আদি এবং নব্য বিজেপির মধ্যে গন্ডগোল, মারামারি, ফাটাফাটি হয়। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কোনও মৃত্যু সমর্থন করি না। প্রশাসনকে বলব এর বিহিত করা হোক।’’ সুফিয়ানের দাবি, সোনাচূড়ায় তৃণমূল সমর্থকদের একের পর এক বাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালিয়েছে বিজেপি। সুফিয়ানের দাবি, ‘‘ওদের ইস্যু তৈরি করতে হবে। নিজেদের গন্ডগোলকে তৃণমূলের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। এটাই ওদের কাজ। এটাই ওদের সংস্কৃতি।’’