(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপিতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর সন্ধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু জানিয়ে দিলেন, এ বার গত দু’বছরে অভিজিতের দেওয়া বিভিন্ন রায়ের নেপথ্যে ‘অভিসন্ধি’র প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হবে।
অভিজিৎ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পদ্মের পতাকা হাতে নিচ্ছেন তিনি। সে কথা জানানোর সময়েই তিনি বলেন, বিজেপি তাঁর সঙ্গে এবং তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। ওই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। বলেছেন, ‘‘উনি বলেছেন আমি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এবং বিজেপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অর্থাৎ, বিভিন্ন সময়ে যখন উনি বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন, তখন বিজেপির সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল। বাকিটা আমি জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।’’ এর পরেই জানা গেল, সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন অভিষেক।
অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বলেন, ‘‘গত প্রায় দু’বছর ধরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মামলা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সিবিআই বা ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন তাঁর পর্যবেক্ষণে।’’ একই সঙ্গে সঞ্জয় বলেন, ‘‘এখন যখন তিনি আদালত ছেড়ে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন, তখন এটা স্পষ্ট যে, তিনি আইনের উপরে দাঁড়িয়ে নয়, নির্দেশ ও রায় দিয়েছেন একটি রাজনৈতিক দলকে লক্ষ্য করে। লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে মিথ্যা এবং সাজানো মামলায় দল এবং দলের নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।’’
অভিজিৎ সম্পর্কে আরও অভিযোগ আনতে চলেছেন অভিষেক। দাবি করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট মামলা অন্য আদালতে পাঠালে বিচারপতি অমৃতা সিংহকেও অভিষেক সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করতে অভিজিৎ ‘অনুপ্রেরণা’ জুগিয়েছেন। যা তিনি আগেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন। এর পরে অভিষেককে নিয়ে যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে জনমানসে অভিষেকের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই যে এই সব করা হয়েছে, তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন ঘোষণা করার পরে।’’ সেই সঙ্গেই সঞ্জয় জানিয়েছেন, ‘‘শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হবে। সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়া থেকে বিভিন্ন নির্দেশ— সবের আড়ালেই ছিল পরিকল্পিত রাজনৈতিক লক্ষ্য। তিনি নিজেই সেটা দিনের আলোয় এনে দিয়েছেন।’’
ওই আবেদনে এ-ও বলা হবে, যাতে গত দু’বছর ধরে বিভিন্ন মামলায় অভিজিৎ বিচারপতি হিসাবে যে যে রায় দিয়েছেন, সেগুলি আবার বিবেচনা করে দেখা হোক। সঞ্জয় বলেন, ‘‘শুধু অভিষেক নন, তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছে তদন্ত। সিবিআই বা ইডির চালানো সেই সব তদন্তের উপরেও স্থগিতাদেশ চাওয়া হবে।’’ অভিষেকের আইনজীবী এ-ও দাবি করেছেন যে, বিচারপতি হিসাবে তাঁর ছ’বছরের মেয়াদে অভিজিৎ খুবই কম ‘রায়’ দিয়েছেন। ২০২৪ সালে ৫৩১টি ‘নির্দেশ’ দিলেও ‘রায়’ একটিও দেননি।