—প্রতীকী ছবি।
জনজাতি ও কুড়মি সমীকরণ যেন সিঁড়িভাঙা অঙ্ক। আদিবাসী সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনে তাই সাবধানী শাসকদল তৃণমূল। প্রার্থী নন। কুড়মি অধ্যুষিত এলাকায় প্রথমে পৌঁছচ্ছেন তৃণমূলের কুড়মি নেতারা। বোঝার চেষ্টা করছেন কুড়মিদের মনের কথা।
অঙ্ক কেন সিঁড়িভাঙা? প্রথমত, জনজাতি তালিকাভুক্তি-সহ একাধিক জাতিসত্তার দাবিতে সরব কুড়মিরা। দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যার যেমন আশু সমাধান সম্ভব নয়, তেমনি রাজ্যকে কাজ করতে হয় সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই। জনজাতি গোষ্ঠীগুলি কুড়মিদের দাবির সঙ্গে একেবারেই সহমত নয়। অর্থাৎ স্বার্থের সংঘাত স্পষ্ট। এক সিঁড়িতে পা রাখলে অন্য সিঁড়ি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয়ত, দু’টি কুড়মি সংগঠন পৃথক ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কুড়মি ভোটব্যাঙ্কের বিভাজন কী ভাবে হবে, তার ফল পক্ষে আসবে না বিপক্ষে যাবে সে হিসাব সিঁড়িভাঙা অঙ্কের চেয়ে কম জটিল নয়।
মাস দেড়েক আগের কথা। কুড়মি অধ্যুষিত পুরুলিয়া জেলায় প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘দয়া করে ভোট এলে আদিবাসী ও মাহাতোদের মধ্যে ঝগড়া লাগাবেন না। কারণ অনেক মাহাতোও আদিবাসী আছেন।’’ তার পরে ঝাড়গ্রামের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জুড়ে ছিল কেবল জনজাতিদেরই কথা। মঞ্চে জনজাতি সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বরা ঠাঁই পেলেও কুড়মি সামাজিক সংগঠনের নেতাদের ডাকা হয়নি। ইতিমধ্যে ভোটের ঘণ্টা বেজেছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজ এবং আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজ ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে পৃথক ভাবে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আবার রাজেশ মাহাতো, শিবাজী মাহাতো, রবীন্দ্র মাহাতোর নেতৃত্বাধীন ঘাঘর ঘেরা আন্দোলন মঞ্চের ‘দৌদিয়াকে খৌসিয়া’ কমিটির কুড়মি নেতারা সম্প্রতি জনসভা করে জানিয়ে দিয়েছেন, দু’টি কুড়মি সংগঠনের পৃথক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টিকে তাঁরা সমর্থন করছেন না। বরং কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবির বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের টালবাহানার অভিযোগ তুলে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন রাজেশরা। এমন আবহে সিঁড়িভাঙা অঙ্ক কষছে তৃণমূল।শাসক দলের তরফে রবিবার সন্ধ্যায় লোধাশুলিতে এক বৈঠকে কুড়মি এলাকায় ভোট প্রচারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে কুড়মি গ্রামে ছোট ছোট পাড়া বৈঠক করে এবং বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সচেতন করা হবে।