অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চম দফার ভোটের দিনই রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করে গিয়েছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের পরাজয়ের প্রহর গোনা আরও এগিয়ে গিয়েছে এবং তৃতীয় বারের জন্য দেশে বিজেপির সরকার গড়া নিশ্চিত। এ বার ষষ্ঠ দফার ভোটের প্রচারে রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করলেন, পাঁচ দফাতেই ৩১০ আসন জিতে মোদী ফের সরকার গড়ে ফেলেছেন!
পূর্ব মেদিনীপুরে বুধবার দিনের প্রথম সভায় শাহ বলেন, ‘‘পাঁচ দফা লোকসভা ভোট শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলাফল কী হয়েছে, জানেন? তা হলে জেনে রাখুন, মোদীজি পাঁচ দফায় ৩১০ আসন পেয়ে গিয়েছেন। মমতা দিদির ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে!’’ এ রাজ্যেও বিজেপির দারুণ ফল হবে ও তার পরেই তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে যাবে বলেও এ দিন দাবি করেছেন শাহ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষ জেনে রাখুন, এই বার অন্তত পক্ষে ৩০ আসন পেতে চলেছেন মোদীজি। যদি ৩০ আসন আমরা পাই, তা হলে তৃণমূল টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। মমতা দিদির সরকারের বিদায় আসন্ন!’’ প্রসঙ্গত, এর আগে আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও শাহ বলেছিলেন, তাঁরা কোনও নির্বাচিত সরকার ভাঙতে চান না। কিন্তু বাংলায় বিজেপি ৩০-এর কাছাকাছি আসন পেলে তৃণমূল নিজে থেকেই ভেঙে পড়বে। এ বার নির্বাচনী সভাতেও সেই দাবি শোনা গেল শাহের মুখে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইতিমধ্যে দাবি করেছেন, বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ ৩০০ আসনের বেশি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে শাহের দাবিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এই রকম বাণী মানুষ শুনেছেন। দু’শো পারের কথা বলে ৭৭ পেয়েছিলেন! তা-ও রাখতে পারেননি। তার কী পরিণতি হয়েছে, তা-ও তাঁরা দেখেছেন। এ বারেও তার পুরনাবৃত্তি হবে।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘অমিত শাহ বিজেপির ফ্লপ জ্যোতিষী!’’
পুরুলিয়ার সভাতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘ষষ্ঠ ও সপ্তম দফায় চারশো পার হবে আপনাদের আশীর্বাদে। রাহুল বাবা আর মমতা দিদির আর কিছু রইল না! মা-মাটি-মানুষের স্লোগান তুলে মমতা দিদি বাংলায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। পুরুলিয়ার মানুষ কমিউনিস্টদের হারিয়ে মমতা দিদিকে ক্ষমতায় আনেন। মা- মাটি-মানুষ গায়েব হয়ে গিয়ে মোল্লা, মাদ্রাসা আর মাফিয়ারা জায়গা নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছেন। আপনারা বাংলায় মোদীজিকে ৩০-এর বেশি আসন দিন। মানুষ তো কোন ছার, পাখিও সীমান্ত পার হতে পারবে না!’’ অনুপ্রবেশ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), ইমাম ভাতা, রামমন্দিরের উদ্বোধনে বিরোধীদের অনুপস্থিতি— সব এক সূত্রে গেঁথে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষেণের রাজনীতির অভিযোগ করেছেন শাহ।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রচারে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার জনসভায় আবার শাহের গলায় ছিল কার্যত বিধানসভা নির্বাচনের সুর। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ডেবরায় এ দিন শাহ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেছেন? কাটমানি, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, অনুপ্রবেশ, কয়লা পাচার, গরু পাচার, বোমাবাজিতে প্রশ্রয় দিয়েছেন। এক বার আপনারা বিজেপি সরকার গড়ে দিন, এই সব বন্ধ করে মোদীজি নিজে এই বাংলাকে সোনার বাংলা বানাবেণ।” সঙ্গে জুড়েছেন সন্দেশখালিও। শাহ বলেছেন, “গোটা দেশ সন্দেশখালির ঘটনায় ক্ষুব্ধ। এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাকের ডগায় বহু বছর ধরে ধর্মের নামে মা-বোনেদের উপরে অত্যাচার চলেছে। কারণ, ওরা ওঁর (মমতা) ভোটব্যাঙ্ক। মমতার লজ্জা পাওয়া উচিত। নির্বাচনের পরে সন্দেশখালির দোষীকে সাজা দেওয়ার কাজ বিজেপি করবে।” রাজ্যে এ দিন প্রচারে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাও। তবে দুর্যোগের কারণে তাঁর দু’টি সভা বাতিল হয়েছে। রাজারহাটের হোটেলে দলের যুব সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছেন নড্ডা।