পূর্বস্থলীতে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
পরপর দু’টি সভা। দুই জায়গাতেই তৃণমূলের স্থানীয় মন্ত্রী, বিধায়কদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ, কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বালি, কয়লা ব্যবসায় নেতাদের যোগ, চাকরি-দুর্নীতি নিয়ে সরব হন তিনি। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, সবটাই কুৎসা আর অপপ্রচার। বিজেপি কী করতে চায়ছে, মানুষ জানেন।
মঙ্গলবার দুপুরে শুভেন্দু প্রথম সভা করেন পূর্বস্থলীর থানা মাঠে। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র প্রসঙ্গ তুলে তিনি অভিযোগ করেন, “তৃণমূল মায়েদের ভয় দেখাচ্ছে। এখানে একটা মন্ত্রী আছে। মন্ত্রীর গুণের শেষ নেই।’’ চাকরি ‘চুরি’ প্রসঙ্গেও মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে বেঁধেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর অভিযোগ, “স্বপন দেবনাথের ঘরে দু’টো জাল চাকরি আছে। তপনের মেয়েও ২০১৪ সালে সাদা খাতা জমা দিয়েছিল।’’ ওই সভা থেকে তৃণমূলের একাধিক ব্লক সভাপতি, কালনার এক তৃণমূল নেতার নাম করে বেআইনি বালি কারবারে তাঁর যোগ রয়েছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “বালি ব্যবসা করছে রায়না, আউশগ্রামের তৃণমূলের নেতারা। এলাকায় একটা বৈধ ঘাট থাকলে একশোটা অবৈধ ঘাট।’’ নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হলে তৃণমূলের দুর্নীতিবাজ নেতা-নেত্রীরা সবাই জেলে যাবে বলেও দাবি করেন তিনি।
স্বপন দেবনাথের দাবি, ‘‘কুৎসা আর অপপ্রচার করাই ওঁর কাজ। আগেও এমন করেছেন। এ বারও সেটাই করছেন।’’ আর বিধায়ক তপনের পাল্টা দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুকথা বলা নিয়ে বার বার শুভেন্দুর বিরোধিতা করেছি। তাই আমার প্রতি রাগ রয়েছে। আমার মেয়ে উচ্চশিক্ষিত। মাধ্যমিকে, উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর পেয়েছে। পারলে শুভেন্দু প্রমাণ করুক। সবটাই নাটক।’’
ভাতারের স্কুল মাঠের সভাতেও শুভেন্দু বলেন, “তৃণমূল লক্ষ্মীর ভান্ডার কেড়ে নেবে বলছে! যেন বাপের টাকা। আপনারা বলবেন, কেড়ে দেখ। এটা সরকারের টাকা।” তাঁর দাবি, “বিজেপি যে দিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে তার পরের মাসের ১ তারিখ থেকে অন্নপূর্ণা প্রকল্পে তিন হাজার টাকা করে দেব। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, দিবাঙ্গ ভাতা তিন হাজার টাকা করে দেব।” এখানেও বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু। বিধায়কের সঙ্গে চালকল মালিকদের ‘যোগসাজস’ রয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, “ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে চাষিদের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।” এরপরেই বিধায়ককে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “মস্তানি বন্ধ করুন। এলাকায় সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। আপনার অবস্থায় কেষ্ট মণ্ডলের মতো হবে।” গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি কর্মী খুন, কর্মী-যুব মোর্চার নেতাদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অনেককে ঘরছাড়া হতে হয়েছে বলেও দাবি করেন। বিজেপির কর্মীরা তাঁকে জানান, এরুয়ারে এখনও অনেকে ঘরছাড়া রয়েছে। যা শুনে শুভেন্দু বলেন, “ঘরছাড়াদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দেব। কত ক্ষমতা আছে, দেখব। বর্ধমানও লাল দুর্গ ছিল। বিনয় কোঙার, অমল হালদার, প্রয়াত নিরুপম সেনরাও ভাবতেন, সিপিএমই থেকে যাবে। কিন্তু চিরদিন কারও সমান যায় না।”
ভাতারের বিধায়কের দাবি, “ভাতারে বিরোধীরা পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিয়েছেন। শান্তিতে ভোট ও গণনা হয়েছে। অশান্তি দূরের কথা, সৌজন্যে ভোট হয়েছে।” তাঁর টিপ্পনী, “বিরোধী দলনেতা অনেক কিছুই বলতে পারেন। আসলে উনি দলের প্রার্থীকেই হারাতে এসেছেন।”