ফুরফুরে মেজাজে ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক (সাদা শার্টে)। সোমবার, নীলগঞ্জের কাছে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
সদ্য বৃষ্টি থেমেছে। অধিকাংশ বুথ তখনও ফাঁকা। রাস্তায় দু’-এক জন করে বেরোতে শুরু করেছেন। খান ত্রিশেক গাড়ির কনভয় চলেছে নৈহাটি থেকে আমডাঙার দিকে। সেই কনভয়ের একেবারে প্রথমে থাকা সাদা এসইউভি-র কাচ নামিয়ে প্রবীণ এক ভোটারকে হাসিমুখে ডাকলেন সামনের আসনে বসা যাত্রী— ‘হ্যালো স্যর, ভাল আছেন?’ পাশে এসে গাড়ি থামিয়ে এমন করে কেউ কথা বলায় অবাক চোখে খানিক ক্ষণ চেয়ে হেসে ফেললেন সেই বৃদ্ধ। সোমবার সকালে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের এমন ফুরফুরে মেজাজে জনসংযোগ নজর কেড়েছে বিরোধীদেরও।
ভোটের দিন পার্থের সকালটা শুরু হয়েছিল নৈহাটিতে বড়মার মন্দির আর হনুমান মন্দিরে পুজো দিয়ে। এর পরেই সটান বাড়ির কাছে প্রফুল্ল সেন গার্লস হাইস্কুলের মডেল বুথে হাজির হয়ে ভোট দেওয়ার পরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের একটি হোটেলে হাজির হন তিনি। সেখানেই দিনের সফরসূচির খসড়া তৈরি হয়। কোথায় কোথায় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে যাওয়া দরকার, তা নিয়ে কিছু ফোনালাপ চলে। পার্থ জেনে নেন অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির অর্জুন সিংহের গতিবিধি। প্রাতরাশ সেরে ভাটপাড়ার পথে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তত ক্ষণে তাঁর পিছু নিয়েছে চব্বিশ-পঁচিশটি সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। ভাটপাড়ার আট নম্বর ওয়ার্ড, নিউ কর্ড রোড, সুন্দিয়াপাড়া হয়ে ঘোষপাড়া রোড ধরে নৈহাটির দিকে চলতে থাকে কনভয়। তার খানিক আগেই ওই পথে ততোধিক গাড়ির কনভয় নিয়ে গিয়েছেন অর্জুন। লোকজনের ধারণা হয়, কনভয়ের সামনে থাকা কালো কাচ তোলা গাড়ির সওয়ারি বুঝি অর্জুন। তাঁদের ভুল ভাঙান পার্থ। কাচ নামিয়ে এক গাল হেসে বলেন, ‘‘ভয় নেই, আমি পার্থ। আছি তো আপনাদের সঙ্গে। কোথাও কোনও গন্ডগোল নেই, নিশ্চিন্তে নিজের ভোট নিজে দিন।’’ বেশির ভাগ সময়ে গাড়িতে বসেই জনসংযোগ সেরেছেন, আমডাঙা, ব্যারাকপুর-২ ব্লকের শিউলির মতো দু’-একটি জায়গা ছাড়া। তবে যেখানেই নেমেছেন, সেখানেই রীতিমতো চায়ের আসর বসিয়েছেন কর্মী-সমর্থক, এমনকি, ভোটারদের মধ্যে যাঁরা প্রার্থীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে উৎসুক, তাঁদের নিয়ে। ফাঁকফোকরে ঘনিষ্ঠদের কাছে খোঁজ নিয়েছেন, ‘‘অর্জুন এখন কোথায়, কী করছে?’’
অর্জুন দিনের বেশির ভাগ সময় টিটাগড় থেকে বীজপুরের মধ্যে থাকলেও ভোটপর্বের শেষ বেলায় দীর্ঘ সময় আমডাঙায় কাটিয়েছেন পার্থ। অর্জুন যতই অভিযোগের তির ছুড়েছেন ভোট নিয়ে, পার্থ ততই খোশমেজাজে বলেছেন, ‘‘ভোট ভাল হচ্ছে।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে যেখানে যেখানে ঘুরেছেন, সর্বত্রই খুশির হাওয়া। ভোটারদের অনেকেই ‘আবার প্রলয়’-এর ‘হ্যালো স্যর’-কে কাছে পেয়ে নিজস্বী তুলেছেন। অনেকে বলেছেন, ‘‘আপনার হাসিটা খুব সুন্দর।’’
গত কয়েক দিনে এই লোকসভা কেন্দ্রের পথে-প্রান্তরে পোস্টার পড়েছে এবং খবরের কাগজের সঙ্গে লিফলেট বিলি হয়েছে, যাতে দেখা গিয়েছে, অর্জুনের চেহারার সঙ্গে মিল থাকা গেরুয়া উত্তরীয় পরা ‘পল্টু সিং’। নিহত কয়েক জন তৃণমূল কর্মী ও নেতার নাম দিয়ে নীচে লেখা, ‘নো ভোট টু মার্ডারার, এদের হত্যার গণতান্ত্রিক বিচার চাই’। পোস্টার দেখিয়ে মুচকি হাসেন পার্থ, ‘‘মানুষ বুঝেছে, কে কী করেছে। তার ফল আজ মিলবে।’’