রামনবমীর পতাকার পসরা। ঝাড়গ্রাম শহরে তোলা ছবি। নিজস্ব চিত্র।
লক্ষ্য ‘ভোট’। তাই রামনবমীতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের পৃথক কর্মসূচি নয়, বার্তা সঙ্ঘের। সঙ্ঘের নির্দেশে একত্রিত ভাবে গঠন হয়েছে রামনবমী উদযাপন সমিতি। সাধারণ মানুষকে বেশি সংখ্যায় অংশগ্রহণ করানোই সমিতির মূল লক্ষ্য। এমনকি রামনবমীর মিছিলে থাকবেন আদিবাসী ও কুড়মিদের সমাজের মানুষজন। তবে রামনবমীর দিনকে হাতছাড়া করতে নারাজ শাসক দল তৃণমূল। ‘জীব সেবা’র নামে জেলার প্রতিটি ব্লকে সরবত বিতরণ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
রামনবমীর দিন সঙ্ঘের নানা শাখা সংগঠগনের উদ্যোগে জেলা জুড়ে নানা অনুষ্ঠান হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে কেড়িয়া ভবন থেকে শোভাযাত্রা হত। আবার হিন্দু জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে পুরতান ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা হত। কিন্তু এ বার রামনবমী নিয়ে সঙ্ঘ বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে নিয়ে বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেয়, এ বার কোনও শাখা সংগঠনের নামে শোভাযাত্রা নয়। তাই রামনবমীর উদযাপন সমিতি গঠন করা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা না যায়, যে সঙ্ঘের শাখা সংগঠনের উদ্যোগে শোভাযাত্রা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেশি করে সাধারণ মানুষকে শোভাযাত্রা যোগ দেওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সঙ্ঘ। এ জন্য শোভাযাত্রায় প্রথমে থাকবে খোল-কীর্তন। তারপর থাকবে ধামসা-মাদল। শেষে থাকবে ডিজে।
সঙ্ঘের নির্দেশে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের এ ভাবেই খোল-কীর্তন, ধামসা-মাদল সহকারে রামনবমীর শোভাযাত্রা হয়েছিল। যদিও রামনবমী উদযাপন সমিতির এক কর্তা বলছেন, ‘‘রামনবমীতে ভারতীয় সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়া হবে। আদিবাসী সংস্কৃতি ঐতিহ্য রাখার জন্য ধামসা-মাদল থাকবে। আদিবাসী-কুড়মি সমস্ত সমাজের মানুষজন থাকবেন।’’ ওই কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রামায়ণের কাহিনি উল্লেখ করেই আদিবাসী ও কুড়মিদের সঙ্গে সনাতন ধর্মের যোগসূত্র রয়েছে। জঙ্গলমহলে জনজাতি ও কুড়মিদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই এখানে রামায়ণের নিষাদরাজ গুহকের কথা। উপজাতি রাজা গুহক ছিলেন রামের বাল্যসখা। সেই সঙ্গে বলা হয় সিদো-কানহোর আত্মত্যাগের কাহিনি। পাশাপাশি, বেশির ভাগ কুড়মির বাড়িতে তুলসীতলা থাকে। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে ‘হরিবোল’ ধ্বনি দেওয়া হয়। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কথায়, আদিবাসী ও কুড়মিদের হিন্দু হিসাবে রামনবমীতে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার যাবতীয় আয়োজনই করছে সঙ্ঘ।
রামনবমীর দিন সাবিত্রী মন্দির ও কেড়িয়া ভবনে পুজো হবে সকালে। তারপর দুপুরে শোভাযাত্রা হবে সাবিত্রী মন্দির থেকে। সেই শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষকে জমায়েত করার উদ্যোগ নিয়েছে রামনবমী উদযাপন সমিতি। সমিতির সম্পাদক বাপ্পা বসাক বলছেন, ‘‘রামনবমীর উদযাপন সমাজের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে সঙ্ঘের কোনও ফ্যক্টর নয়। সঙ্ঘ কেবল দিশা দেখাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে কাছে পাওয়ার জন্য কোনও সংগঠন ছাড়াই এই অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এখানে কুড়মি-আদিবাসী সমাজের মানুষজন থাকবেন। এ জন্য নাম রাখা হয়েছে রামনবমী উদযাপন সমিতি।’’
ওইদিন ঝাড়গ্রাম শহর ছাড়াও গোপীবল্লভপুর রামনবমী উৎসব কমিটির উদ্যোগে বাইক র্যালি হবে। পালইডাঙ্গা থেকে বাইক র্যালি, শিলদা থেকে ঝাড়গ্রাম বাইক র্যালি হবে। তবে ভোটে আগে রামনবমীর দিনটিকে হাতছাড়া করতে নারাজ শাসক দল তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘রামনবমীতে প্রতিটি ব্লক জুড়ে শরবত বিতরণ করা হবে। মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ হবে। জীবকে সেবা করাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য।’’ দুলাল আরও বলছেন, সব ধর্মই এক। এখন ধর্মর নামে কেউ কেউ ভোট বৈতরণী পার করার চেষ্টা চলছে। মানুষ এদের মুখোশ ধরে ফেলেছে।’’