মহম্মদ সেলিম এবং বিমান বসু। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
কংগ্রেসের সঙ্গে কি জোট হবে? শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠকে বড় শরিক সিপিএমের উদ্দেশে এটাই মূল প্রশ্ন ছিল শরিকদলগুলির। সূত্রের খবর, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু থেকে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে ধোঁয়াশা কাটেনি। জোটের ভবিষ্যৎ এখনও অথৈ জলে।
ফ্রন্ট সূত্রের খবর, সেলিম এবং বিমান দু’জনেই বলেছেন, তাঁরা জানেন না কংগ্রেস কী অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কংগ্রেসও (প্রদেশ) জানে না তারা কোথায়। ফলে যত ক্ষণ না বার্তা আসছে, তত ক্ষণ কিছু করার নেই। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বৈঠকে বলেছেন, বামেদের তরফে যা বার্তা দেওয়ার, তা কংগ্রেসকে দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ বার কংগ্রেসকেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই। তৃণমূল ৪২টি আসনে একাই লড়বে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মমতার কথারই প্রতিধ্বনি করেছিলেন। পাশাপাশিই কংগ্রেস সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বারবার বলা সত্ত্বেও কংগ্রেস আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু করতে চায়নি। পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করেছে। অতি চালাকের গলায় দড়ি!’’ আপাতদৃষ্টিতে এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বাম--কংগ্রেস জোট বা আসন সমঝোতা হওয়ার পক্ষে কোনও বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু তা হচ্ছে না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন সেলিম। সে দিন জেলায় ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। সেলিম আগের দিন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, অধীরের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। কিন্তু তা হয়নি। সে দিনই প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে কি কংগ্রেস হাইকমান্ড বামেদের সঙ্গে জোটে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি? তাই কি অধীর সেই বৈঠক এড়িয়ে গেলেন?
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফের দিল্লিতে চাউর হয়, নতুন করে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে জোটের কথা শুরু হয়েছে। তাতে তৃণমূলকে অসম ও মেঘালয়ে আসন ছাড়ার বিষয় নিয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল। কংগ্রেসের একটি সূত্র বলেছিল, রাজ্যে তৃণমূলকে কংগ্রেস তাদের পাঁচটি আসন ছেড়ে দিতে বলছে। যার বিনিময়ে তারা কংগ্রেসের তরফে অসমের একটি লোকসভা আসন এবং মেঘালয়ের তুরা লোকসভা আসনে সমর্থন চাইছে। যদিও তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, মমতা আগে যে অবস্থান নিয়েছিলেন (একলা চলার), তাতে কোনও বদল হয়নি।
শুক্রবারের ফ্রন্টের বৈঠকে শরিকদলগুলি প্রশ্ন তোলে, (জোট) আর কবে হবে? ভোট ঘোষণার পরে কি জোট হবে? কিন্তু সেলিমেরা শরিকদের স্পষ্ট জানান, গোটা বিষয়টিতে কংগ্রেস সাড়া না দিলে সিপিএম কী করতে পারে! তবে ফ্রন্টে ঠিক হয়েছে, ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের জন্য তারা অপেক্ষা করবে। অর্থাৎ, আরও সাত দিন। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও চলতে থাকবে। তবে কংগ্রেসের ব্যাপারে মৃদু আপত্তি রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের। কারণ, কংগ্রেসের এ বার অগ্রাধিকারের আসন পুরুলিয়া। আবার ফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে সেটি ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাপ্য। তবে সিপিএম আশাবাদী, কংগ্রেস জোটের ব্যাপারে রাজি হলে ফরওয়ার্ড ব্লককে ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ বোঝানো সম্ভব হবে।
বস্তুত, শুধু বামফ্রন্টের মধ্যে নয়, প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যেও আলোচনা রয়েছে কাদের সঙ্গে জোট হবে তা নিয়ে। প্রদেশ কংগ্রেসের বড় অংশের নেতাই তৃণমূলের হাত ধরার ঘোরতর বিরোধী। তবে তাঁরা এটাও জানেন, হাইকমান্ড বললে তাঁদের ‘না’ করার জো নেই।