নিখরচায় চিকিৎসার সুবিধা পাবেন লোকসভা ভোটের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। —ফাইল ছবি।
লোকসভা ভোটের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের প্রত্যেককে নিখরচায় চিকিৎসার (ক্যাশলেস ট্রিটমেন্ট) আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ঠিক যে সুবিধা পেয়ে থাকেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বরাবরই নীতিগত আপত্তি রয়েছে রাজ্য সরকারের। সেই দিক থেকে এই অবস্থানকে ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মৃত জওয়ানদের বকেয়া থাকা ক্ষতিপূরণের টাকাও কিছু দিন আগেই ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নবান্নের শীর্ষস্তরের আধিকারিকেরা।
রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ জেলা-আধিকারিদের লিখিত বার্তায় নবান্ন জানিয়েছে, সব কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য ২০১৪ সালে তৈরি রাজ্যের ‘ক্যাশলেস মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট স্কিম’-এর আওতায় এই সুবিধা দেওয়া হবে রাজ্যে ডিউটিতে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সব জওয়ানকেই। ভোটের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হলে, দুর্ঘটনায় পড়লে বা অন্য কোনও ঘটনায় (ইনসিডেন্ট) আহত হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা বাইরের রাজ্য থেকে আসা সশস্ত্র কোনও জওয়ান এই সুবিধা পাবেন। রাজ্য সরকারের ওই প্রকল্পের আওতায় থাকা সব বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা মিলবে। চিকিৎসা বাবদ যাবতীয় খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। জেলাগুলিতে বিভিন্ন ধরনের মোট ৬৯টি হাসপাতালেও এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
প্রশাসনিক সূত্রের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই জওয়ানদের মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা খরচের অর্থ বকেয়া ছিল। গত মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি সামনে এনেছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ঘটনাচক্রে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ দিল্লি ফিরে যাওয়ার পরে মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় নবান্ন। তাতে কোভিডে কারও মৃত্যু হলে ৩০ লক্ষ টাকা এবং কর্তব্যরত অবস্থায় কোনও গোলমাল বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে মাথাপিছু ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
বস্তুত, রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিক এবং কর্তাদের অনেকের দাবি, কমিশন-কর্তাদের বেশ কড়া মনোভাবের আঁচ পেয়েছিলেন তাঁরা। এমনকি, কর্তব্যে কোনও রকম গাফিলতি দিল্লির নির্বাচন সদন যে মেনে নেবে না, স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল তা-ও।
ভোট বিশেষজ্ঞদের অনেকে জানাচ্ছেন, ভোটের সময় তীব্র দাবদাহের কারণে ভোটকর্মী বা নিরাপত্তাকর্মীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আহতও হতে হয় অনেককে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ বহন কে করবে, তা নিয়ে একটা টানাপড়েনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজ্যের নতুন পদক্ষেপের ফলে সেই সমস্যা আর থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভোটে আসা বাহিনীর জওয়ানদের ‘ক্যাসলেশ’ চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক প্রবীণ আমলার কথায়, ‘‘ভোটের সময় অতীতে অনেক বারই আহত জওয়ানের চিকিৎসা এবং তার ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চরম জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে সেইটানাপড়েনের অবসান হবে বলেই আশা করা যায়।’’