—প্রতীকী চিত্র।
দেশ জুড়েই সার্বিক ভাবে ভোটদানের হার কম ও তাতে বিজেপির ‘দুশ্চিন্তা’ নিয়ে নানা মহলে চর্চা চলছে। যদিও এর মধ্যেই এলাকা ধরে ধরে ভোটদানের তারতম্যের অঙ্ক কষে রাজ্যে তিন পর্বে যে ১০টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত ৮টিতে জয়ের আশা দেখছে রাজ্য বিজেপি। তাদের দাবি, যে আসনগুলিতে আগে বিজেপির ফল ভাল হয়েছে, সেখানে অতীতের তুলনায় ভোটদানের হার এ বার খুব একটা কমেনি। বরং, বিজেপির দুর্বল জয়গাগুলিতেই তা নজরে পড়ার মতো কমেছে।
রাজ্য বিজেপি সূত্রের দাবি, ১০টির মধ্যে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে জয় কার্যত নিশ্চিত। কিন্তু সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ এবং বালুরঘাট কেন্দ্র নিয়ে চর্চা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। গত লোকসভায় মালদহ দক্ষিণ বাদে তিনটি আসনই ছিল বিজেপির দখলে।
যদিও ভোটদানের তারতম্যের অঙ্ক কষে ওই চারটি আসনেও তাঁরাই এগিয়ে থাকবেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। যুক্তি হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, মালদহ উত্তরের অন্তর্গত গাজল, হবিবপুর ও মালদহ বিধানসভা এলাকায় গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে দল ভাল ফল করেছিল। দলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ মালদহ, গাজল ও হবিবপুর এ বারেও যথাক্রমে ৮০.৮৯%, ৭৯.৪৯% ও ৭৭.২০% ভোট পড়েছে।
উল্টো দিকে, গত দু’টি নির্বাচনের নিরিখে ‘দুর্বল’ এলাকা রতুয়া, মালতিপুর, চাঁচল ও হরিশচন্দ্রপুরে এ বার ভোটদানের হার যথাক্রমে ৭৩.১১%, ৭৩.৪১%, ৭৩.৭৮% ও ৭৪.৪৪%। একই অঙ্ক রয়েছে রায়গঞ্জেও। গত ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে করণদিঘি, হেমতাবাদ, কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ভাল এবং ইসলামপুর, গোয়ালপোখর এবং চাকুলিয়ায় খারাপ ফল হয়েছিল বিজেপির। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে করণদিঘি ও হেমতাবাদ বিজেপির হাতছাড়া হয়। এ বারের নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ ও করণদিঘিতে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৮১.৯০%, ৮০.৭৫%, ৭৭.২৯% ও ৭৬.৭২%। উল্টো দিকে, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া ও ইসলামপুরে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৭০.২৮%, ৭১.২৮% এবং ৭৩.৫৪%। তার উপরে শেষ তিনটি বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে ভাল ভোট পড়েছে বলেও বিজেপির একটি অংশের দাবি।
দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আসন, বালুরঘাট কেন্দ্রের বালুরঘাট, তপন ও গঙ্গারামপুরে গত দু’টি নির্বাচনে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। এই নির্বাচনে ওই এলাকাগুলিতে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৮০.৬১%, ৮০.৮২% ও ৮০.২৬%। এ ছাড়া, তৃণমূলের সঙ্গে অতন্ত কম ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা কুশমন্ডি ও কুমারগঞ্জেও ভোটদানের হার ৭৯.৭৮% ও ৭৯.৫৮%। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ ইটাহার ও হরিরামপুরে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৭৫.২৭% ও ৭৭.৮৭%।
মালদহ দক্ষিণ লোকসভা আসনেও বিজেপির ভরসা দুর্বল আসনে কম ভোটদানের হার এবং ভোট কাটাকাটির অঙ্ক। গত লোকসভা নির্বাচনে মানিকচক, ইংরেজবাজার ও বৈষ্ণবনগরে বিজেপি এগিয়েছিল। সুজাপুর, ফরাক্কা, সমশেরগঞ্জ ও মোথাবাড়িতে এগিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে মানিকচক-সহ কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা সব আসন জিতেছিল তৃণমূল। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বৈষ্ণবনগর ও ইংরেজবাজারে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৭৯.৭৩% ও ৭৯.২২%। অপর দিকে, মানিকচক, সুজাপুর, মোথাবাড়ি, ফরাক্কা ও সমশেরগঞ্জে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৭৩.৯০%, ৭৪.৪৯%, ৭৫.২৯%, ৭৬.৩৪% ও ৭৭.৩৮%।
ভোটদানের এমন তারতম্য এবং ভোট কাটাকাটির অঙ্ক মিলিয়েই উত্তরবঙ্গে এ বার আটে আট করতে চাইছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক নেতার দাবি, “যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে ফল আমাদের পক্ষে যাবে। এমন ভোট হলে রাজ্যে ৩০টা আসনও পেতে পারি আমরা।”
তবে দলের অন্দরে অন্য বক্তব্যও আছে। বিজেপির এক নেতার দাবি, “ইংরেজবাজারে এ বারে আমাদের এগিয়ে থাকার ব্যবধান কমবে। তবে মানিকচক, বৈষ্ণবনগরে আমাদের ভোট বাড়বে। কিন্তু সুজাপুর, সমশেরগঞ্জ, মোথাবাড়ি, ফরাক্কায় আমাদের ফল খারাপ হতে
পারে। সব মিলিয়ে জয়ের সম্ভবনা থাকলেও মালদহ দক্ষিণ আসন আমাদের জন্য খুব একটা ইতিবাচক নয়।”