Lok Sabha Election 2024

ভিন্ রাজ্যেও অস্ত্র কারবারে মুঙ্গের-যোগ

কলকাতার পুলিশের থেকে তথ্য পেয়ে যৌথ অভিযান হয়েছিল অরওয়ালে। নগেন্দ্রকুমার সিংহ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির উপকরণ উদ্ধারের পাশাপাশি, একটি লেদ মেশিন ও একটি ড্রিল মেশিন পাওয়া যায়।

Advertisement

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বিহারের অরওয়াল জেলা এক সময় বিশেষ কারণে গোটা দেশে কুখ্যাত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ওই জেলারই প্রত্যন্ত গ্রাম লখিমপুর বাথেতে ৫৮ জন দলিতকে মধ্যরাতে হত্যা করা হয়। নিহতের তালিকায় এক-দুই বছরের শিশুরাও ছিল। অভিযোগের তির ছিল, উচ্চবর্ণের সংগঠন রণবীর সেনার দিকে। তাদের বাড়বাড়ন্ত এখন আর নেই। তবে কয়েকমাস আগে অরওয়াল জেলারই রাধে বিঘা গ্রামে খোঁজ মিলেছে একটি অস্ত্র কারখানার। সেখানে মুঙ্গেরের কারিগরদের নিয়ে গিয়ে অস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল।

Advertisement

কলকাতার পুলিশের থেকে তথ্য পেয়ে যৌথ অভিযান হয়েছিল অরওয়ালে। নগেন্দ্রকুমার সিংহ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির উপকরণ উদ্ধারের পাশাপাশি, একটি লেদ মেশিন ও একটি ড্রিল মেশিন পাওয়া যায়। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এই লেদ মেশিনই হচ্ছে অস্ত্র তৈরির মূল চালিকাশক্তি, যাকে বলে শিরদাঁড়া। অস্ত্র তৈরির জন্য সরু ও মোটা বিভিন্ন মাপের লোহার পাত কাটতে প্রয়োজন লেদ মেশিনের। তাই পুলিশ ‘পাখির চোখ’ করেছে লেদ কারখানাগুলিকে। গত কয়েক বছর ধরে মুঙ্গের ও আশপাশের লেদ কারখানাগুলির উপর তীক্ষ্ণ নজর ছিল পুলিশের। লেদ মেশিন চালাতে প্রয়োজন ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইনের। এই ধরনের বিদ্যুৎ লাইনের গ্রাহকদের তালিকা ধরেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। তার পরেই মুঙ্গের এলাকা থেকে কিছুটা রণেভঙ্গ দেয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। বরং লেদ কারখানা বসাতে অসুবিধা নেই, তেমন জায়গাগুলিই খুঁজে বার করার চেষ্টা করে তারা। হয় মুঙ্গেরের কারিগরদের সেখানে নিয়ে গিয়ে অথবা ওই কারখানাতেই যন্ত্রাংশ তৈরি করে ফিনিশিংয়ের কাজ মুঙ্গেরের কারিগরদের হাতে করানোর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বেআইনি অস্ত্র তৈরির শিকড় সে ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিহারের আশপাশের রাজ্যগুলিতে।

মুঙ্গেরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ইমরান মাসুদের মতে, অন্য রাজ্যগুলিতে নতুন নতুন জায়গায় অস্ত্র কারখানার সন্ধান যত মিলছে, ততই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে মুঙ্গেরের পরিযায়ী বন্দুক কারিগরদের কথা। আর যারা মুঙ্গেরে থেকে নিজের বাড়ির মায়া কাটাতে পারেনি, তারা পৌঁছে যাচ্ছে গঙ্গায় দিয়ারায় কিংবা জামুই, লখিসরাইয়ের পাহাড়, জঙ্গল ঘেরা নির্জন এলাকায়। সেখানে তাবু খাটিয়ে কিংবা কোনও বাড়ির ঘরের আড়ালে চলছে যন্ত্রাংশগুলিকে দেশি বন্দুকে রূপ দেওয়ার কাজ। তারপর সরবরাহকারীদের হাত ঘুরে তা পৌঁছচ্ছে চাহিদার জোগান হয়ে। এ ভাবেই বৈধ ব্যবসার সমান্তরালে রমরমিয়ে চলছে অস্ত্রের অবৈধ কাজকারবার।

Advertisement

দেশি বন্দুকের কারিগরদের নিয়ে এসে কাজ করানোর ঘটনা সামনে এসেছে পশ্চিমবঙ্গেও। এ রাজ্যের পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল (নিরাপত্তা) সুখেন্দু হীরা জানান, ২০১৩ সালে ডোমজুড়ের বাঁকড়াতে অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল। দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ তার খোঁজ পেয়েছিল। পরের বছর আরও একটি ঘটনা ঘটে। সে বার হাওড়ার নলপুর স্টেশনের কাছে, বাউড়িয়া থানা এলাকায় একটি নির্জন বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল অস্ত্রের কারবারিরা। বিহার পুলিশ মুঙ্গেরের একজনকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল সেই গোপন আস্তানায়। ওই লেদ কারাখানার মিস্ত্রিদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারা। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে অবশ্য আসামিদের ব্যাপারে জানিয়েছিল।

মুঙ্গেরের সেই বঙ্গ-যোগ আজও কাটেনি। (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement