Lok Sabha Election 2024

বুনো হোক বা পোষা, নির্বাচনেও জোর চর্চায় ‘আনা’

কেরলের উত্তরাঞ্চলে বন্য প্রাণীর তাণ্ডব স্থানীয় জনতার কাছে সত্যিই মাথাব্যথার কারণ। ওয়েনাড় ও কোঝিকোড় জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা আছে, যা জঙ্গলে মোড়া।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলপেট্টা (ওয়েনাড়) শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৮
Share:

ত্রিশূর পুরমে দেবতার ছবি নিয়ে হাতি রামচন্দ্রনের যাত্রা। — নিজস্ব চিত্র।

অজীশ, পল, প্রহীশ। ভোটার তালিকায় নামগুলো এখনও আছে। তবে এ বার আর ওয়েনাড়ে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো হবে না তাঁদের।

Advertisement

বুনো হাতির আক্রমণে দু’মাস আগে প্রাণ গিয়েছে অজীশের। ওয়েনাড়ে জঙ্গল লাগোয়া যে বসতি এলাকা, সেখানে জন্তু-জানোয়ারের গতিবিধির উপরে নজরদারির কাজ করতেন ওয়াচম্যান অজীশ। পল ছিলেন স্থানীয় পর্যটনের গাইড। তিনিও পড়েছিলেন হাতির (মালয়ালমে ‘আনা’) পায়ের তলায়। আর কৃষক প্রহীশ শিকার হয়েছেন বাঘের হামলার। পরপর এই তিন জনের মৃত্যুর পরে ক্ষুব্ধ জনতা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং বন্য প্রাণীর কবল থেকে বাঁচার উপায়ের দাবিতে পথ অবরোধও করেছিল।

উত্তরপ্রদেশে তাঁর ‘ভারত জোড়া ন্যায় যাত্রা’ স্থগিত রেখে ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধী এসে মৃত তিন জনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ঠিক ব্যবস্থা হয়, সে সব নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এখন ভোটের মরসুমে রাহুল ও তাঁর দল কংগ্রেসের নেতারা কেরলের বাম সরকারকে প্রবল আক্রমণ করছেন। জবাব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং সিপিএম নেতারাও। এর মধ্যে হারিয়েই যেতে বসেছে মানুষ ও বন্য প্রাণীর সংঘাতের সমস্যার মীমাংসা!

Advertisement

কেরলের উত্তরাঞ্চলে বন্য প্রাণীর তাণ্ডব স্থানীয় জনতার কাছে সত্যিই মাথাব্যথার কারণ। ওয়েনাড় ও কোঝিকোড় জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা আছে, যা জঙ্গলে মোড়া। কলপেট্টা থেকে সুলতান বাতেরি হয়ে মহীশূরের দিকে এগোলে কেরল, কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের অধীন একাধিক ফরেস্ট রেঞ্জ রয়েছে। বন্য প্রাণীদের সংরক্ষণের তাগিদে এই রাস্তায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্নাটক সরকার। রুটি-রুজির জন্য যাতায়াতে অভ্যস্ত স্থানীয় মানুষ আবার এই ‘নাইট ট্রাভেল ব্যান’-এও অসন্তুষ্ট। সব ধরনের সরকারের কাছে তাঁরা সমাধান চান।

বর্তমান সাংসদ হিসেবে রাহুল যেমন স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন, তেমনই ওয়েনাড়ে এ বার সিপিআই প্রার্থী অ্যানি রাজা এবং বিজেপি প্রার্থী কে সুরেন্দ্রনকেও সমস্যার কথা জানিয়েছে জনতা। সিপিআইয়ের ওয়েনাড় জেলা সম্পাদক ই জে বাবু বলছেন, ‘‘জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় সমস্যা তো আছেই। কয়েক দিন আগে কালপেট্টা শহরে পর্যন্ত বুনো শুয়োর বেরিয়ে পড়েছিল! কদাচিৎ বাঘ, বাকিটা হাতি, বুনো মহিষ, শুয়োরের উপদ্রব। সব পক্ষকে আলোচনায় বসে এর সমাধান বার করতে হবে।’’ কংগ্রেসের ওয়েনাড় জেলা সভাপতি আপ্পাচানেরও বক্তব্য, ‘‘কেরল, কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু সরকারকে মিলে কিছু পথ বার করতে হবে। রাহুল গান্ধী সেই কাজে সাহায্য করার কথাই বলেছেন।’’
যদিও বিজেপির সুরেন্দ্রনের প্রশ্ন, ওয়েনাড়ে সাংসদ কংগ্রেসের, রাজ্যে সরকার বামেদের। তারা এখনও কিছু করেনি কেন!

উত্তরে যখন বুনো হাতির হাত থেকে বাঁচতে জনতা মরিয়া, দক্ষিণের দিকে নজর দিলে জনতা আবার ‘পুণ্যবান’ হাতিকে অবহেলার প্রতিবাদে উদ্বেল! কয়েক দিন আগেই ছিল ‘ত্রিশূর পুরম’। যে উৎসবে হাতির বড় ভূমিকা থাকে, পুজো এবং উৎসবে বিপুল ভিড় জমে। এ বার ত্রিশূর পুলিশ জমায়েতে বেশ কিছু কড়াকড়ি করেছিল।
উৎসবের রাতে যে আতস বাজির প্রদর্শনী হয়, প্রশাসনিক নানা জটিলতায় সেটাও হয়েছে পরের দিন সকালে, দিনের আলোয়! এখানেই শেষ নয়। হাতিদের খাবার দিতে যাওয়ার মাহুতদের আটকাচ্ছেন পুলিশ কমিশনার, এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই ভোটের বাজারে কংগ্রেস এবং বিজেপি সরব হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে ঘোষণা করতে হয়েছে, ‘ত্রিশূর পুরমে’ যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে পুলিশ কমিশনার অঙ্কিত অশোকান
এবং এক অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে নির্বাচন বিধি জারি থাকায় এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

উত্তর-দক্ষিণ মেলালে কোথাও তাণ্ডব থেকে রেহাই চাই, কোথাও অনাদরের প্রতিকার চাই। কেরলের ভোটে জমিয়েই বসেছে হাতি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement