(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে নির্বাচনে বিজেপির সংগঠন কেন ব্যর্থ হল তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছে আরএসএস।
গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদী যত শক্তিশালী হয়েছেন, ততই আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ার অভিযোগ উঠেছে। দু’সপ্তাহ আগে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা দল ও সঙ্ঘের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “অতীতে বিজেপি দল হিসেবে ছোট ছিল। অক্ষম ছিল। এখন বিজেপি পরিণত এবং সক্ষম। তাই বিজেপি এখন একাই চলতে পারে।” কথাটা ভাল ভাবে নেননি সঙ্ঘ নেতৃত্ব। এতে দুই শিবিরের দূরত্ব আরও বাড়বে বলে ঘরোয়া ভাবে মেনে নেন বিজেপির অনেক নেতা। অনেকের মতে, আজ বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়াটা আরএসএসের কাছে শাপে বর। তারা এ বার বিজেপির উপরে হারানো নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও ফিরে পাবে, বিশেষত সরকারি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
বস্তুত, নড্ডার বিদায়ও আসন্ন। তাঁর সভাপতিত্বের মেয়াদ গত জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও জুন পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছিল। এ বার ভোটে বিজেপির ফল আশানুরূপ না হওয়ার আক্ষেপ নিয়েই সরতে হবে তাঁকে। সূত্রের মতে, পরবর্তী সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর।
সূত্রের মতে, এ বারের নির্বাচনে সঙ্ঘ চেয়েছিল, মোদীর জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সরকার যে ভাবে বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প প্রান্তিক মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে— সেই বিষয়টিকে প্রচারের মূল হাতিয়ার করা হোক। জাতীয় সুরক্ষা আগের থেকে মজবুত হওয়ার ভাষ্যকেও প্রচারে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। কিন্তু বিজেপি ‘মোদী গ্যারান্টি’-কে সামনে রেখে প্রচারে নামে। কেবলমাত্র এক জন নেতাকে সামনে রেখে ‘চারশো পারের’ প্রচার অন্য শরিকদের কতটা আশ্বস্ত করবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন সঙ্ঘ নেতারা। ফলে প্রচারের প্রশ্নে দুই শিবিরের মধ্যে দূরত্ব রয়েই যায়।
ভোটের ঠিক আগে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা নেতাদের বিজেপিতে অন্তর্ভুক্তি ও তাঁদের টিকিট দেওয়া নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল আরএসএসের। বিশেষ করে মহারাষ্ট্রে অশোক চহ্বাণকে দলে নেওয়া এনসিপির অজিত পওয়ারের সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে তৃণমূল স্তরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল সঙ্ঘ কর্মীদের। আরএসএসের আপত্তির আরেকটি কারণ ছিল ওই নেতাদের সঙ্ঘের আদর্শ সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকা। সেই আপত্তিও ধোপে টেঁকেনি। আরএসএসের আশা, এ বারের ফলের পরে আগামী দিনে দলে দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রবেশ কমবে। গত এক দশকে বিজেপি কর্মীদের দাপটে সঙ্ঘের কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। বিরোধীদের মতে, এই কারণে এ বারের ভোটে সঙ্ঘের কর্মীরা অধিকাংশই বসে যান। যার প্রভাব পড়ে ভোটদানের হারে। মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে ভোটদানের হারে হ্রাসেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বহু মানুষ ভোট দিতে বেরোননি। এঁদের বড় অংশ বিজেপির ভোটার। ফলে ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপির সংগঠনের ব্যর্থতা নিয়ে ভাবা দরকার বলে মনে করাচ্ছে সঙ্ঘ।
সঙ্ঘ নেতৃত্বের মতে, তাঁদের উদ্বেগ সত্ত্বেও বেকারত্বের সমস্যাটিকে আমল দেননি বিজেপি নেতারা। বেকারত্ব এ বারের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ক্ষোভ ছিল ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প নিয়েও। এ সবের ফলে যুব সমাজের একাংশ দূরে সরে গিয়েছেন। আরএসএস মনে করছে, ভবিষ্যতে রোজগার বৃদ্ধিই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন সরকারের।
এখন শরিকদের সাহায্য ছাড়া বিজেপির সরকার গড়া অসম্ভব। মোদী তাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অভ্যন্তরেই। শরিকদের সঙ্গে নিয়ে চলার প্রশ্নে নিতিন গডকড়ী সেরা বাজি হতে পারেন বলে অনেকের মত। যদিও তাঁরা জানেন, মোদীকে সরানো এই মুহূর্তে কার্যত অসম্ভব।