Lok Sabha Election 2024

বয়কটের ডাক নেই, সোমবার ভোট শ্রীনগরে

উপত্যকার তিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র শ্রীনগর, অনন্তনাগ-রাজৌরি ও বারামুলায় এ বারে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে মনে করছেন উপত্যকার রাজনীতিকেরাও।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ০৮:৩৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রাত পোহালেই ভোট। তা-ও আবার খাস শ্রীনগরে। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের পরে এমন নির্বাচনের কথা মনে করতে পারছেন না উপত্যকাবাসী। কারণ, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিদের তরফে ভোট বয়কটের ডাক একেবারেই নেই। বরং মূলস্রোতের দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও পিডিপি-র কর্মীদের আটক হওয়ার দাবি নিয়ে আপাতত সরগরম কাশ্মীরি রাজনীতি।

Advertisement

উপত্যকার তিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র শ্রীনগর, অনন্তনাগ-রাজৌরি ও বারামুলায় এ বারে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে মনে করছেন উপত্যকার রাজনীতিকেরাও। ভোটের হারও অনেক বেশি হবে বলে আশা তাঁদের। তিন কেন্দ্রের মধ্যে আগামিকাল ভোট হবে শ্রীনগরে।

বিশেষ মর্যাদা লোপের পরের প্রথম লোকসভা ভোট হচ্ছে কাশ্মীরে। এনসি-র নেতা ইমরান দারের মতে, ‘‘বয়কটের ডাক ছাড়া ভোট কাশ্মীরের গণতন্ত্রের পক্ষে ইতিবাচক বিষয়। বোঝা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে কাশ্মীরে।’’ একই মত এসপি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মহম্মদ ইখলাকের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ রয়েছে এই নির্বাচনে। সেই সুযোগকে ব্যবহার করা উচিত কাশ্মীরিদের। একই বক্তব্য এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির।

Advertisement

উপত্যকার মধ্যে শ্রীনগরে বরাবরই ভোটের হার কম। এ বার তা বাড়াতে বড় মাপের প্রচার অভিযান চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিজেপি নেতা আলতাফ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরবাসীর কাছে আমাদের আর্জি, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন।’’

এর মধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে দুই দলের কর্মীদের আটক করা নিয়ে। শ্রীনগর, পুলওয়ামা, শোপিয়ান ও বাদগামে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি-র কিছু কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি দুই দলের। তাদের দাবি, এই পদক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাই ওই কর্মীদের এখনই মুক্তি দেওয়া উচিত।

শ্রীনগরে ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী আগা রুহুল্লা মেহদির দাবি, ‘‘চারারশরিফ, খানসাহাব, চাদুরার মতো এলাকা থেকে আমাদের কর্মীদের আটক করা হচ্ছে। আমাদের প্রবীণ নেতা এ আর রাঠের এ কথা জানিয়েছেন। আমাদের আর পিডিপি-র আটক হওয়া কর্মীদের এখনই মুক্তি দেওয়া হোক।’’ সমাজমাধ্যমে নিজের পোস্টে নির্বাচন কমিশনকে ট্যাগ করেছেন আগা। একই সুরে সমাজমাধ্যমে সরব পিডিপি নেতা ফিরদৌস টাক। শ্রীনগরের পিডিপি প্রার্থী যুবনেতা ওয়াহিদ প্যারার দাবি, ১৯৮৭ সালে ভোটে হওয়া রিগিংয়ের কায়দায় জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের অফিসারদের একাংশ চলতি লোকসভা ভোটকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। ১৯৮৭ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিল এন সি। সেই ভোটে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। তার পরেই কাশ্মীরের বহু যুবক জঙ্গি দলে যোগ দেন বলে মত রাজনীতিকদের। সরাসরি বিজেপির নাম না করলেও অভিযোগের তির কাদের দিকে, তা স্পষ্ট।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ এক দলের হয়ে অন্য দলের কর্মীকে হেনস্থা করছে, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযোগের ভিত্তিতে নগদ আটক, মাদক আটক, দুষ্কৃতী ও জঙ্গি-যোগ থাকা ব্যক্তিদের আটক করার মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। আদর্শ আচরণবিধি মেনে স্বচ্ছ ও অবাধ ভোট করানোয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পুলিশ। পুলিশের সমালোচনা আগেও হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে জল্পনা প্রকাশ্যে ছড়ানো হলে সুরক্ষার সমস্যা দেখা দেয়।

রাজনৈতিক কর্মীদের আটক হওয়া নিয়ে মুখ খোলেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তারা জানিয়েছে, রাজনৈতিক কর্মীদের ‘ভীতি প্রদর্শন’ ও ১৪৪ ধারা জারি নিয়ে সমাজমাধ্যমে কিছু অভিযোগ কমিশনের চোখে পড়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, নিয়ম মেনেই শ্রীনগর কেন্দ্রের অন্তর্গত জেলাগুলিতে গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। জনসভার অনুমতি প্রসঙ্গে অভিযোগের জবাবে কমিশনের বক্তব্য, ‘‘আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সভার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়নি। অনলাইনে ‘সুবিধা পোর্টাল’-এর মাধ্যমে অনুমতি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার সুরক্ষা পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে প্রার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement