মুকুটমণি অধিকারীর স্ত্রী স্বস্তিকা মহেশ্বরী বিজেপিতে যোগ দিলেন মিঠুন চক্রবর্তীর সভায় গিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে। এ বার ভোটের ময়দানেও রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী তথা স্বামী মুকুটমণি অধিকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন স্ত্রী স্বস্তিকা মহেশ্বরী। রানাঘাটে মিঠুন চক্রবর্তীর সভায় যোগ দিয়ে স্বস্তিকা বললেন, ‘‘মুকুটমণিকে ভোট দিলে আমার মতোই ঠকতে হবে।’’ এ ব্যাপারে আনন্দবাজার অনলাইন মুকুটমণির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু উনি ফোন ধরেননি। তবে মুকুটমণির সহকারী শ্রীকান্ত বিশ্বাস ফোনে বলেন, ‘‘দাদা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।’’
বিজেপিতে যোগদান করে স্বস্তিকা দাবি করেন, মুকুটমণি কখনওই তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। সমাজে তাঁকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিতেও অস্বীকার করতেন। স্বস্তিকা বলেন, ‘‘গত বছর ২৮ মে মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে আমার রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দিন ২৯ মে থেকেই মুকুটমণি অধিকারী মিউচুয়াল ডিভোর্স চাইতে শুরু করেন। মা, বাবা, ভাই, দিদি, জামাইবাবুর উপস্থিতিতেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর উনি স্ত্রীর পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন। এমনকি আমার থেকে ১ কোটি টাকাও দাবি করা হয়। ডিভোর্স চেয়ে আমাকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করেছিলেন মুকুটমণি অধিকারী।’’
গত বছর ৭ জুন তিলজলা থানায় মুকুটমণির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা স্বস্তিকা। সেই সময় বিজেপিতে ছিলেন মুকুটমণি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়কও হয়েছিলেন। বিয়ের ১১ দিনের মাথায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে মুকুটমণির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, তোলাবাজি, বিশ্বাসভঙ্গ, আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগ করেছিলেন স্বস্তিকা। মোট ৬টি ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এর পরেই কিছু দিন ‘বেপাত্তা’ হয়ে গিয়েছিলেন মুকুটমণি! পরে যখন প্রকাশ্যে আসেন, তখনও স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। স্ত্রীর তোলা অভিযোগ নিয়ে এখন তিনি কী বলেন, তা-ই দেখার।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় মুকুটমণির নাম রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে আসে। একে মতুয়া সম্প্রয়াদের, তার উপর এলাকায় জনপ্রিয় চিকিৎসক হওয়ার কারণে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারি চাকরিতে তাঁর ইস্তফা গৃহীত না হওয়ায় লোকসভা ভোটে দাঁড়ানো হয়নি মুকুটমণির। শেষ মুহূর্তে রানাঘাট আসনে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জেতেন জগন্নাথ সরকার। পরে বিধানসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। মুকুটমণি জেতেনও। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সুনজরে ছিলেন মুকুটমণি। ৩৩ বছর বয়সে দলের জাতীয় কর্মসমিতির ‘কনিষ্ঠতম’ সদস্যও হয়েছিলেন। তাঁকে রাজ্যে বিজেপির তফসিলি মোর্চার ‘ইনচার্জ’ও করা হয়েছিল। একই সঙ্গে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সংগঠন সামলাতেন মুকুটমণি। ওই পরিস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় বেজায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বকে। সেই মুকুটমণি এখন তৃণমূলে। লোকসভা ভোটে রানাঘাটের প্রার্থীও হয়েছেন। এ বার তাঁর স্ত্রী বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সেই বধূ নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ফের সরব হওয়ায় ভোটের মুখে কার্যত বিড়ম্বনায় পড়তে হল রাজ্যের শাসকদলকে।