সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের কমিটিতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে না রেখে যে আইন সরকার পাশ করিয়েছে, নতুন একটি মামলায় তাতে স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট।
আবেদনকারীদের তরফে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আইনটির যে ৭ নম্বর ধারায় প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ কমিটির বাইরে রাখা হয়েছে, সেটি এখনই স্থগিত করার আর্জি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার অনুপচন্দ্র পাণ্ডে বুধবার অবসর নিচ্ছেন। নিয়োগ কমিটিতে স্থগিতাদেশ না দিলে নতুন কমিশনার নিয়োগ হয়ে যাবে, যিনি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও দায়িত্বে থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জীবকুমার খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ সেই আর্জি নাকচ করে দেন। তাঁরা বলেন এ বিষয়ে এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস) আগেই যে মামলাটি করেছেন, সেটি এপ্রিলে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই আর্জিটির শুনানিও তখনই হবে। ভূষণ বলেন, গুরুত্ব বিচার করে মামলাটির শুনানি এগিয়ে না আনলে সেটির রায়ে দেশবাসী উপকার পাবে না। বিচারপতিরা এই আবেদনও খারিজ করে বলেন, আইনটির সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়টি যখন বিবেচনাযোগ্য, তার রায় কখনও নিষ্ফলা হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করাও অনুচিত। সুতরাং শুনানি এগিয়ে আনার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছেন না তাঁরা।
বিরোধীশূন্য সংসদে পাশ করানো ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনারস অ্যাক্ট ২০২৩’-এর ৭ নম্বর ধারাটিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটির সদস্যদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে— কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কমিটিতে। সদস্য হিসেবে থাকবেন সংসদে বিরোধী নেতা বা বৃহত্তম দলের সংসদীয় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকলেও নতুন আইনে তাঁর জায়গায় আর এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, তিন সদস্যের কমিটিতে ২ জনই সরকার পক্ষের প্রতিনিধি থাকায় নির্বাচন কমিশনার পদে সরকারের পছন্দের লোকেরাই নিয়োগ পাবে, যা কমিশনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাঁদের অভিযোগ, নতুন আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টিতে কার্যত দখলদারি কায়েম করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি রাজনৈতিক হয়ে পড়ল বলেও মনে করেন অনেকে। কারও কারও আবার দাবি, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়াটা অসাংবিধানিক।
এই সব প্রশ্ন তুলেই এডিআর নতুন আইন রদ চেয়ে মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্টে, যা এপ্রিলে শুনানির জন্য তালিকায় উঠেছে। বিচারপতি খন্না জানান, তাঁদের বেঞ্চ কেবল জনস্বার্থ মামলার বিচার করে। সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়টি নিয়ে রায় দেওয়ার এক্তিয়ার এই বেঞ্চের নেই। এমন একটি গুরুতর বিষয়ে তাড়াহুড়ো করাটাও অপ্রয়োজনীয়। তাই আইনটির কোনও ধারার উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল না।