মুকুটমনি অধিকারী। ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের মতুয়া ভোটে ধস নেমে ছিল আগেই। এ বার রানাঘাটে মুকুটমণি অধিকারীকে প্রার্থী করে বিজেপির থেকে তা কতটা নিজেদের দিকে টানা যায়, আপাতত সেই হিসাবই কষছে তৃণমূল।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোট বরাবরই অন্যতম নির্ণায়ক শক্তি। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিশেষত কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, রানাঘাট উত্তর পূর্ব ও চাকদহে মতুয়া ভোটের আধিক্য রয়েছে। অন্য কেন্দ্রগুলিতে মতুয়া ভোট থাকলেও তার সংখ্যা তুলনায় কম। রাজ্যে যখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছিল, সেই সময় এই সমস্ত জায়গাতে তৃণমূলের দাপট ছিল। তবে গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই ছবিটা পাল্টে যায়। গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে মতুয়া বলয়ে বিজেপিরই রমরমা হয়েছে।
এ বার রানাঘাটে তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছেন সেই মুকুটমণি অধিকারী সদ্য বিজেপি ছেড়ে আসা বিধায়ক। গত বিধানসভা ভোটে রানাঘাট দক্ষিণের মতো মতুয়া গড়ে তিনি পদ্ম প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন। বিজেপি ঘেঁষা মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা সভাপতিও ছিলেন তিনি। তাঁকে শুধু দলে টানাই নয়, রানাঘাট লোকসভা আসনে প্রার্থী করাও তৃণমূলের অন্যতম চমক ছিল। এখন তাঁর হাত ধরে মতুয়া ভোট কতটা ঘুরবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, মতুয়াদের মধ্যে মুকুটের ভাল প্রভাব রয়েছে। তাঁর বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জে, ও-দিকে তিনি রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক। ফলে ওই দুই জায়গাতেই মতুয়াদের উপর তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রভাব থাকবে। আবার বিজেপির দাবি, মতুয়ারা যে নির্বিচারে মুকুটের অনুগামী হবেন, তা মোটেই নয়। তিনি একটি সংগঠনের দায়িত্ব ছিলেন। সেই সংগঠন ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে অন্যেরা তাঁকে অনুসরণ করবেন না। বরং এই দলবদল অনেকেই পছন্দ করছেন না।
তবে রানাঘাট ১ ব্লক বা শান্তিপুরের মতো কোথাও কোথাও অনেকেই মুকুটের অনুগামী হয়ে তাঁকে অনুসরণ করেছেন ইতিমধ্যে। মুকুটকে সমর্থনের কথাও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন কেউ কেউ। সেই সংখ্যাটা অবশ্য এখনও খুব বড় কিছু নয়। সব মিলিয়ে সমস্ত জায়গা থেকে মুকুট কতটা মতুয়া ভোট নিজের দিকে টেনে আনতে পারবেন, তার উপরেই নির্ভর করবে অনেক কিছু। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার গত বার প্রায় দু’লক্ষ ৩৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। অনেকেরই ধারমা, এ বার সেই ব্যবধান অনেকটাই কমবে। কিন্তু ফলাফল উল্টে যেতে পারে কি না তা নির্ভর করবে মুকুটের হাতযশের উপরেই।
এ প্রসঙ্গে মুকুটমণির দাবি, "দীর্ঘ দিন ধরেই আমি মতুয়া ভক্তদের সঙ্গে রয়েছি। তাঁরাও আমার সঙ্গে আছেন। এ বারও এখানকার বেশির ভাগ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আমার সঙ্গে থাকবেন।" জগন্নাথ পাল্টা বলেন, "মতুয়ারা আগাগোড়া বিজেপির সঙ্গেই আছেন। কেউ দল বদল করলেই মতুয়ারা তাঁর অনুগামী হবেন, এটা যাঁরা ভাবছেন তাঁরা ভুল ভাবছেন।"