প্রধান মন্ত্রীর সভার জন্যে মঞ্চ প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ মাঠে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
কৃষ্ণনগরকেই কেন জনসভা করার জন্য বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী, সেই প্রশ্নই এখন নদিয়ার রাজনৈতিক মহলে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তার সম্ভাব্য কারণ অবশ্য একটি নয়, একাধিক।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আগামী ২ মার্চ মোদীর এই জনসভা মূলত দলের নবদ্বীপ জ়োন-কেন্দ্রিক। এই জ়োনের মধ্যে নদিয়ার দুই লোকসভা কেন্দ্র রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার তিন কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও জঙ্গিপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বনগাঁ। ভৌগোলিক দিক দিয়ে কৃষ্ণনগর এই জ়োনের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থিত। সেই সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেকটাই সুবিধাজনক। সেই কারণে কৃষ্ণনগরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে আরও কয়েকটি বিষয় যার কোনওটিই গুরুত্বে খাটো নয়। এক) শান্তিপুর, নবদ্বীপ ও মায়াপুরের মত ধর্মীয় ঐতিহ্যমণ্ডিত জায়গাগুলির প্রায় মাঝামাঝি রয়েছে কৃষ্ণনগর। ফলে এই সমস্ত এলাকার ‘ধর্মপ্রাণ হিন্দু’ ভোটারদের সভায় টানা সহজ হবে। দুই) রানাঘাট ও বনগাঁ লোকসভা এলাকায় তো বটেই, উত্তর নদিয়ারও ছোট অংশে মতুয়া ও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। গত লোকসভা ভোট থেকেই এঁদের বড় অংশ বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। এনআরসি তথা নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, তা জানতে উদগ্রীব তাঁরা। তিন) আবার কৃষ্ণনগর ও মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র সংখ্যালঘু প্রভাবিত। এনআরসি নিয়ে এই সব এলাকায় ভীতি এবং বিতৃষ্ণা রয়েছে। তা দূর করে মোদী যদি এঁদের কাছে টানতে পারেন, সব চেনা হিসেব বদলে যাবে। চার) কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আদানি-বিরোধিতা এবং আখেরে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে সংসদ থেকে বহিষ্কার বিজেপি নেতৃত্বের সামনে এই কেন্দ্র জিতে জনসমর্থন প্রমাণ করার নতুন চ্যালেঞ্জ খাড়া করেছে।
রানাঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, “নদিয়ায় দাঁড়িয়েই নরেন্দ্র মোদী প্রথম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। হয়তো কৃষ্ণনগরে এসেই তিনি এনআরসি করার কথা ঘোষণা করতে পারেন।” আবার কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বাসিন্দা তথা বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “সংখ্যালঘুদের পাশেও যে বিজেপি সমান ভাবে আছে, সেই বার্তাও তো মোদীজিকেই দিতে হবে।”
তবে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, “এনআরসি করে মুসলিমদের তাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, আবার মুখে মুসলিম-প্রীতি দেখাতে আসছে। মোদীর দলের ভাঁওতাবাজি সংখ্যালঘুরা ধরে ফেলেছেন।”