Lok Sabha Election 2024

নির্বিঘ্নে ভোট কী ভাবে, খুজছে জেলা

তা হলে কোন জাদু মন্ত্রের বলে এ বার এমন নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে? সাধারণ মানুষের দাবি, মূলত পুলিশের নিরপেক্ষতার কারণেই এমন নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৪ ০৯:১৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

নির্বাচন মানেই মুর্শিদাবাদ জেলায় বোমা, গুলি আর খুন-জখম। একটুও রক্তপাতহীন নির্বাচন দেখে জেলার মানুষ কিছুটা অবাকই। জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে শাসক থেকে বিরোধীদের ওজনদার প্রার্থী ছিল। ছিল আগাম উত্তেজনাও। এমনকি নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র সহ বোমা উদ্ধার হয়েছে এই জেলা থেকে। আর সেখান থেকেই আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল মুর্শিদাবাদবাসীর মনে। কিন্তু দু'দফায় তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হয়ে যাওয়ার পরে গোটা জেলা জুড়েই একটা স্বস্তির হাওয়া বয়ে গিয়েছে। রক্তপাতহীন একটা নির্বাচন পেয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ। আর এখান থেকেই একটা প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, তাহলে এতদিন রক্তপাতহীন নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি কেন? রাজনৈতিক মহলের দাবি, এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল কিন্তু তার পরেও প্রাণ বা রক্ত ঝরা বন্ধ করা যায়নি এই জেলায়।

Advertisement

তা হলে কোন জাদু মন্ত্রের বলে এ বার এমন নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে?

সাধারণ মানুষের দাবি, মূলত পুলিশের নিরপেক্ষতার কারণেই এমন নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র সহ বোমা উদ্ধার এবং দুষ্কৃতীদের নজরে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে। সেই উদ্ধার কার্যের সময় অনেকেই মনে করেছিলেন ভোটের দিন একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে এই জেলায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে একটা নির্বাচন পার করতে পেরেছেন জেলার মানুষ। ডোমকলের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলছেন, ‘‘সরকার প্রশাসনের কাছে ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের উৎসব। আর আমাদের কাছে ভোট মানেই একটা আতঙ্ক। ডোমকলের বাসিন্দা হিসেবে এতদিন যা দেখে এসেছি, তাতে রক্তপাতহীন নির্বাচনের কথা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম।’’

Advertisement

যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, কেবল পুলিশ নয়, মানুষ জেগে উঠেছে। প্রতিরোধ হবে এটা বুঝতে পেরেই শাসক পিছু হটেছে। আর তার ফলেই এমন নির্বাচন সম্ভব হয়েছে মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী, রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘‘পাড়া মহল্লা জেগে উঠেছিল। শাসক বুঝে গিয়েছিল এ বার মস্তানি গুন্ডামি করতে গেলে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ করবেন। আর সেই ভয়েই নির্বাচনের দিন কোনও রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি তারা। তবে এখনও প্রচুর অস্ত্র মজুদ আছে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে। পুলিশ দ্রুত তা উদ্ধার না করতে পারলে পরবর্তী সময়ে আবারও রক্ত ঝরবে এই জেলায়।’’ সে কথা পুলিশও বুঝেছিল। রানিনগরের বিধায়ক তৃণমূলের সৌমিক হোসেনও বলেছেন, ‘‘নিচু তলার কিছু পুলিশ বাম-কংগ্রেসকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।’’ পুলিশকর্তারা সে কথা মানতে চাননি। তবে সাধারণ মানুষের দাবি, পুলিশের নিচুতলার এমন ভূমিকার জন্যই ভোট নির্বিঘ্নে হয়েছ।

অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের সৈনিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা কখনও রক্ত নিয়ে হোলি খেলা পছন্দ করেন না। সেটাই কারণ।’’ জেলার পুলিশ সুপার সূর্য প্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে থেকেই আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছিলাম। যেমন প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। তেমনই ভাবে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়াও দক্ষ পুলিশ অফিসারদের কাজে লাগিয়ে আমরা সাফল্য পেয়েছি। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও খুশি গণতন্ত্রের উৎসবকে রক্তমুক্ত করতে পেরে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement