মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নিজেদের শক্তির জায়গায় আরও জোর দেওয়া? নাকি দুর্বল জায়গাকে ভোটের আগে পোক্ত করে তোলা? কী কারণে বীরভূম কেন্দ্রের প্রচারে আগামী ২৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থল হিসেবে হাঁসন বিধানসভা এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে চর্চা চলছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে।
দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে বলছেন, ‘‘দলের সর্বোচ্চ নেত্রী কোথায় সভা করবেন সেটা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক করেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বর নির্দেশ অনুযায়ী সভার স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তবে আশিস প্রকাশ্যে যাই বলুন, হাঁসন বেছে নেওয়ার পিছনে একাধিক কারণের কথা উঠে আসছে দলের অন্দরের আলোচনাতেই।
তৃণমূল সূত্রে দাবি, জেলার মধ্যে হাঁসন বিধানসভা এলাকা তাদের শক্ত ঘাঁটি। তাই নিজের জোরের জায়গায় সমর্থন আরও বাড়াতেও হাঁসনে সভা হতে পারে। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট— এই চারটি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির কাছে তৃণমূল পিছিয়ে গিয়েছিল। ওই চারটি বিধানসভা এলাকায় মোট ৩৭ হাজার ৬৫৪ ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হাঁসন, নলহাটি মুরারই— এই ৩টি বিধানসভাতেই তৃণমূল বিজেপির থেকে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
তিনটি বিধানসভায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকার জন্যই তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় তৃতীয় বারের জন্য বিজয়ী হন। অন্য বারের থেকে জয়ের ব্যবধানও বেড়েছিল শতাব্দীর। এ বারও তাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হাঁসনে সমর্থন ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল হিসেবে হাঁসন বেছে নেওয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। হাঁসনের সঙ্গেই নলহাটি ও মুরারই বিধানসভা কেন্দ্রের কর্মী- সমর্থকদেরও বেশি সংখ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে বলা হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি।
জোরের জায়গা আরও পোক্ত করার পাশাপাশি দুর্বল জায়গায় নজর দেওয়াও হাঁসনে সভা করার কারণ বলে তৃণমূলের অনেকে দাবি করছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন নলহাটি ২ ব্লকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এলাকার ৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টি পঞ্চায়েতে হেরেছে। বীরভূম জেলা পরিষদের একটি মাত্র বিরোধী আসন কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের দখলে আছে। এ ছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন নলহাটি ২ ব্লকের দলের সাংগঠনিক শক্তির মধ্যে চিড় ধরেছে বলেও তৃণমূল সূত্রে দাবি।
হাঁসনে এখন কোনও স্থায়ী ব্লক সভাপতি নেই। পাঁচ জনের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। একক সিদ্ধান্তে দল চলছে না। আবার হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন রামপুরহাট ২ ব্লকের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বর্তমানে অসুস্থ। সেই কারণে ব্লকের অধীন ৯টি পঞ্চায়েতে কর্মীরাও সেই মতো ভাবে নেতৃত্ব পাচ্ছেন না। এক নেতার কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে হয়তো এলাকায় দলের বর্তমান পরিস্থিতির উপর নজর রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হাঁসনেই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
অনেকে আবার মনে করছেন, জোটকে মোকাবিলাও এর কারণ হতে পারে। তাঁরা জানাচ্ছে, এ বারে বীরভূম আসনে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়েছেন হাঁসন কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ও বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মিল্টন রশিদ। হাঁসন, নলহাটি ও মুরারই এই তিন বিধানসভায় কংগ্রেসের অন্য চার বিধানসভা কেন্দ্রের থেকে সংগঠন ভাল। বিজেপি-বিরোধী ভোট তৃণমূলের দিকে না গিয়ে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের ঝুলিতে যেতে পারে বলেও অনেকের দাবি। সেই কারণে হাঁসন, নলহাটি এবং মুরারই— এই তিন বিধানসভার কর্মীদের উপর বিশেষ ভাবে জোর দিতে দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হাঁসনে সভা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে অনেকে দাবি করছেন।