Lok Sabha Election 2024

বিপুল ভোটে জয়ের দাবি তৃণমূলের, প্রশ্ন অনেকের

লোকসভা ভোটে বিধানসভাভিত্তিক কোন দলের কী অবস্থা? প্রচারে কারা কোন বিষয়কে তুলে ধরছে? আজ, উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অনেকেই মনে করছেন, উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বাড়ানো খুব সহজ হবে না। এ তল্লাটে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে ৪২ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফও রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই সংখ্যালঘু ভোট তাঁদেরই পক্ষে আসবে বলে দাবি করছেন উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি তথা পুরসভার জল ও পূর্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পারিষদ আকবর শেখ। তিনি এখনই এতটা নিশ্চিন্ত যে বলেই ফেললেন, ‘‘আমরা এই কেন্দ্রে বিপুল ভোটে লিড দেব।’’ কোন অঙ্কে ‘লিড’ বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

Advertisement

এই বিধানসভা কেন্দ্রটি ‘উলুবেড়িয়া শিল্পাঞ্চল’ নামে পরিচিত। উলুবেড়িয়া শহরও এই কেন্দ্রে। মহকুমাশাসকের দফতর, শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মহকুমা আদালত সবই এখানে। রাজ্যে পালাবদলের পরে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের কথা প্রচারে আনছে তৃণমূল। কিন্তু মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি তৃণমূলের ‘দুর্নীতি’র পাশাপাশি শাসকদলের প্রার্থীর ‘বহিরাগত’ পরিচয়কে তুলে ধরছে।

বিজেপি প্রার্থী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী উলুবেড়িয়া শহরেরই নতিবপুরের বাসিন্দা। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরের দিন থেকে তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন। খলিসানি কালীতলায় দলের তরফে সম্প্রতি আয়োজিত এক চা-চক্রে যোগ দিয়ে অরুণ উদয় কর্মীদের বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ এবং তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমদের মতো আমি বহিরাগত নই। ভূমিপুত্র হিসাবেই লড়াই করছি। আপনাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকব।’’

Advertisement

সাজদার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি যেমন ‘ভূমিকন্যা’ নন, তেমনই আগের বার জেতার পরেও এলাকায় আসতেন না। সেই জায়গায় ‘ভূমিপুত্র’ হিসাবে অরুণ উদয়ের প্রচার তৃণমূলকে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলতে পারে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার আরও আছে। ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে পুরসভার বিরুদ্ধে উঠেছে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। উলুবেড়িয়া শহর জুড়ে সরকারি জমিতে বেআইনি বাড়ি তৈরি, পুকুর বুজিয়ে আবাসন নির্মাণের অভিযোগও কম নয়। এর সঙ্গে রয়েছে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও। বিজেপি প্রার্থীর দাবি, ‘‘আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা তৃণমূলের ভরাডুবি সময়ের অপেক্ষা।’’

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, পুর প্রশাসন এবং রাজনীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেন চেয়ারম্যান অভয় দাস, ভাইস-চেয়ারম্যান ইনামুর রহমান এবং আকবর শেখ। তৃণমূল রাজনীতিতে এই তিন জন ইতিমধ্যেই 'তিন মূর্তি' নামে পরিচিতি পেয়েছে। তাঁদের প্রভাবেই দলের বিপুল সংখ্যক পুরনো কর্মীকে লোকসভা নির্বাচনে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ‘তিন মূর্তি’। তাঁদের দাবি, সাজদা এলাকায় নিয়মিত আসেন। বিজেপি প্রার্থীর বিষয়ে আকবর বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করছি, তিনি যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেখান থেকে জিতে এসে দেখান।’’ ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে দুর্নীতি এবং পুকুর বুজিয়ে আবাসন নির্মাণে ছাড়পত্রের অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান অভয় দাস বলেন, ‘‘এ সব পায়ের তলায় জমি হারানো বিরোধীদের অপপ্রচার।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দের কথাও মানেনি তৃণমূল। মন্ত্রী তথা লোকসভার নির্বাচন কমিটির সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়ছে। এখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।’’

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ২০ হাজার ভোটে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তাদের ব্যবধান কিছু কমে হয় ১৭ হাজার। পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি এবং খলিসানি ও রঘুদেবপুর পঞ্চায়েত আছে তাদের কব্জায়। এ বার সেই দাপট কতটা বজায় রাখতে পারে তৃণমূল সেটাই দেখার। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিকের দাবি, তাঁরাও লড়াইয়ে আছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement