—প্রতীকী চিত্র।
প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে প্রচার। জনগর্জন সভাকে সামনে রেখে চতুর্দিকে সভা করছে তৃণমূল। অথচ লোকসভা ভোটের দোরগোড়ায় হুগলিতে সিপিএম এখনও কার্যত চুপচাপ! রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, দলীয় কর্মসূচির প্রশ্নেও তারা অনেকটাই নিস্তরঙ্গ। সিপিএম নেতৃত্ব না মানলেও দলের একাংশ অবশ্য ঠারেঠোরে তা স্বীকার করছে।
ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সমঝোতা হবে কি না এখনও ততটা স্পষ্ট নয়। বামফ্রন্টের ভিতরে সব দলের বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে, এমনটাও নয়। জল কোন দিকে গড়ায়, সেই দিকে তাকিয়ে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। কোন্নগর নবগ্রামের এক সিপিএম কর্মী বলেন, ‘‘অনেক আগেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল নেতৃত্বের। বিরোধীদের প্যাঁচে ফেলতে অজস্র হাতেগরম বিষয়ছিল। কিন্তু আমাদের সংগঠনগত প্রস্তুতি কোথায়? এত অগোছালো অবস্থায় ভোটে ভাল কিছু প্রত্যাশাকরা উচিত নয়!’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে বড়সড় প্রচারে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও বাড়ি বাড়ি প্রচারের কর্মসূচি চলেছে। হুগলিতে সাড়ে চার লক্ষ বাড়িতে কর্মীরা পৌঁছেছেন দলের বার্তা নিয়ে। আগামী ১০ মার্চ হুগলি এবং বর্ধমানের সীমানায় কালনার বৈদ্যপুরে বড় জনসভা হবে। দলের বিভিন্ন গণসংগঠনের তরফেও প্রতি দিন নানা কর্মসূচি চলছে।’’
একদা ‘বাম দুর্গ’ আরামবাগ মহকুমায় সিপিএম ফের মাথা তুলে দাঁড়াতে জনসংযোগে জোর দিয়েছে। ফেব্রয়ারি মাস জুড়ে চলেছে ‘গণসংযোগ’ এবং ‘গণসংগ্রহ’ (অর্থ) কর্মসূচি। এখন চলছে বুথ ও অঞ্চল কমিটিগুলির পুনর্গঠন। একই সঙ্গে বুথ ও অঞ্চলভিত্তিক মিছিল ও পদযাত্রা করা হচ্ছে। সিপিএমের দাবি, এই সব কর্মসূচিতে ভাল সাড়া মিলছে। বিধানসভা পিছু ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার উপরে তহবিল সংগ্রহ হয়েছে। সব দেখে তাঁদের মনেহচ্ছে, ভোটে আরামবাগ কেন্দ্রেদলের প্রাপ্ত ভোট গত লোকসভা নির্বাচনের (৬.৮৩%) তুলনায় অনেকটাই বাড়বে।
তৃণমূল বা বিজেপি অবশ্য সিপিএমের বক্তব্যকে বিশেষআমল দিতে নারাজ। দুই দলেরই বক্তব্য, গোটা রাজ্যের মতোই হুগলিতেও সিপিএম এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক।
বিরোধীদের দাবি খণ্ডন করে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফারুক আহমেদ লস্কর বলছেন, ‘‘জনসংযোগ, অর্থ সংগ্রহ কর্মূসচিতে ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছে। পুরশুড়া ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতে প্রায় ১১ হাজার পরিবারের কাছে গিয়েছি আমরা। ভোটে ফল ভাল হবেবলেই আশা।’’ একই কথা জানিয়ে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য এক সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়েরদাবি, ‘‘মানুষ আমাদের চাইছেন।’’ দলের প্রার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আসন বোঝাপড়ার বিষয়টি আলোচনা স্তরেই আছে। রাজ্যথেকে যথাসময়ে প্রার্থী ঘোষণাকরা হবে।’’
তবে ভাল ফলের আশা সত্ত্বেও সংশয়ও রয়েছে। গোঘাট এবং খানাকুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভাস্কর রায় বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের চাইছে, লাল ঝান্ডা পাড়ায় বাঁধার কথা বলছে। সব বুথে বসতেই হবে, এই দাবিও করছে। এই অবস্থায় আমরা যদি আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি, নিজেদের জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পারব।’’
পৌঁছতে কোনও বাধা আছে কি?
তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভয়-ভীতির পরিবেশ এখনও রয়ে গিয়েছে। বিশেষত যাঁরা ২০১১ সালের পর মার খেয়েছিলেন, বাড়িছাড়া হয়েছিলেন এবং জরিমানা দিয়ে ঘরে ফিরেছেন এমন অনেক কর্মী কিছুটা সিঁটিয়ে আছেন। এই ফাঁক কী ভাবে পূরণ করা যায়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’’
সার্বিক ভাবেও কতটা ফাঁক ভরাট করতে পারে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা, সেটাই প্রশ্ন।