চোখে পড়ছে এমনই ব্যানার-ফেস্টুন। মেদিনীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে প্রচারে বিজেপির তুরুপের তাস অযোধ্যার রামমন্দির। এ বার সেই রামের রাজ্যাভিষেকের অনুষঙ্গ জুড়ে হিন্দু নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। উদ্যোগের পিছনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)।
সামনে পয়লা বৈশাখ। তবে তারও আগে ৯ এপ্রিল পালিত হবে সেই ‘হিন্দু নববর্ষ’। তার ফেস্টুনে লেখা, ‘হিন্দু নববর্ষের আন্তরিক অভিনন্দন’। সঙ্গে ‘বর্ষ প্রতিপদ উদযাপন সমিতি’র নাম। তৃণমূলের অনুযোগ, লোকসভা ভোটের আগে আরএসএস-বিজেপি হিন্দুত্বের জিগির তুলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
‘বর্ষ প্রতিপদ উদযাপন সমিতি’র এক কার্যকর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, চৈত্র শুক্ল প্রতিপদে ‘হিন্দু নববর্ষ’ প্রতি বছরই পালন করেন তাঁরা। এ বছর দিনটি পড়েছে ৯ এপ্রিল। তাঁর দাবি, এই দিনেই শ্রী রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। ঘটনাচক্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা কেশবরাও বলিরামরাও হেডগেওয়ারের জন্মতিথিও ওই দিনই পড়ে।
আরএসএসের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ সমীরণ মজুমদার বলেন, ‘‘দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। আর ওই দিন থেকেই তো নবরাত্রি শুরু হয়।’’ আরএসএসের মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন কার্যবাহ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি শমিত দাশও বলেন, ‘‘প্রতি বছরই আমরা দিনটি পালন করি।’’
মেদিনীপুর শহরবাসীর একাংশের অবশ্য পর্যবেক্ষণ, হিন্দু নববর্ষ পালনে এমন ধুম এর আগে দেখা যায়নি। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে জিততে রামের শরণাপন্ন হয়েছে ওরা! ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। তবে এ সব করেও বিজেপির কোনও লাভ হবে না! মেদিনীপুরে তৃণমূলই জিতবে।’’
এর আগে অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরেও জেলায় তৎপর ছিল সঙ্ঘ পরিবার। এখন হিন্দু নববর্ষের আগাম অভিনন্দন জানিয়ে গেরুয়া শিবিরের তরফে নানা মাধ্যমে প্রচার চলছে। সেখানেও থাকছে, ‘শ্রীরাম... জয় রাম... জয় জয় রাম...।’
মেদিনীপুরে এক আরএসএস কার্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘কয়েক দশকে এই সব সংস্কৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আমরা সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দিতে চাইছি। দেশের ১৪০ কোটি মানুষই হিন্দু। কারণ তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা সকলেই হিন্দু ছিলেন। ধীরে ধীরে সংখ্যালঘুদের মনেও আরএসএস সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ভাঙছে।’’
উল্লেখ্য, এর আগে জেলায় এসে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশিয়াড়ির মতো এলাকায় সঙ্ঘের সংগঠন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন দলীয় বৈঠকে। আরএসএসের প্রভাব এখানে কেন বাড়ছে, দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে তা জানতেও চেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি দলের নেতাদের জনসংযোগ আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।