প্রশান্ত ভূষণ। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই কলকাতায় এসে শনিবার নির্বাচনী বন্ডের বিষয়টিকে সামনে রেখে মূলত বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া টাকার বড় অংশকে ‘ঘুষ’ বলে উল্লেখ করে পুরো প্রক্রিয়ায় কারা জড়িত, তা জানতে চেয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি তৈরির আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রশান্ত ও সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ এ দিন মৌলালি যুবকেন্দ্রে ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’ এবং ‘ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশন ফর পিপলস রাইট’ নামে দু’টি সংগঠনের আয়োজিত ‘বিপন্ন গণতন্ত্র: মোদী সরকারের নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংস’ শীর্ষক আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন। তার আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবে নির্বাচনী বন্ডের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে তোপ দেগে প্রশান্ত বলেন, “উনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে কালো টাকা দেওয়ার প্রবণতা বন্ধের জন্য নির্বাচনী বন্ড করা হয়েছিল। এখন উনি অম্বানী-আদানি নিয়ে বলছেন। উনি জানেন, অম্বানী, আদানি টেম্পোতে ভরে রাজনৈতিক দলগুলিকে টাকা দেয়। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।” পাশাপাশি, এই ‘বন্ড-চক্রান্তে’ সংশ্লিষ্ট সংস্থা, রাজনৈতিক দল, সরকার, কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-সিবিআই-আয়কর দফতরের কারা কারা শামিল ছিল, তা জানতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতির তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি তৈরির জন্য আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এই বন্ডের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া আইনজীবীদের অন্যতম প্রশান্ত এ দিন জানান, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে মোট সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক বিজেপি পেয়েছে। বাকি অর্ধেক তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, বিজেডি-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলগুলি পেয়েছে। প্রসঙ্গত, কেরলে ক্ষমতায় থাকা সিপিএম যে এই বন্ডের গোড়া থেকেই বিরোধিতা করেছিল, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান আইনজীবী। প্রশান্তের দাবি, বন্ডে প্রাপ্ত টাকার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দলগুলিকে সেই সব সংস্থা টাকা দিয়েছে, যারা কোনও না কোনও ভাবে সরকারের থেকে সুবিধা পেয়েছে। আর সমাজকর্মী অঞ্জলির দাবি, “এখনও ২৫ শতাংশ বন্ডের তথ্য সামনে আসেনি। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১২ এপ্রিল ২০১৯-এর পরে যে বন্ড দেওয়া হয়েছিল, সেই তথ্য সামনে এসেছে। কিন্তু ২০১৮-র মার্চ থেকে ২০১৯-এর এপ্রিল পর্যন্ত বন্ডের তথ্য নেই।”
যদিও রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা শুধু নেট প্র্যাকটিসে শূন্যে ব্যাট ঘুরিয়ে যান। এঁরা তেমনই।” এ দিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “অমরা নীতিগত ভাবে নির্বাচনী বন্ডের বিরোধী। বিজেপি এটা চালু করে বলেছিল, এই নীতি আনলে স্বচ্ছতা আসবে। তাই আমরা এটা মেনেছিলাম।”