Lok Sabha Election 2024

এ নীরবতা কিসের লক্ষণ

বছরের গোড়ায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলে নানা কর্মসূচি করতে দেখা গিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

রানিবাঁধ শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ০৮:৩৪
Share:

— প্রতীকী ছবি।

পঞ্চায়েত, বিধানসভা কিংবা লোকসভা— সব নির্বাচনেই ঘটনার ঘনঘটায় সরগরম থাকে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ বিধানসভা। অথচ এ বার সেই উত্তাপ এখনও নেই এখানে। রাজনৈতিক প্রচারের দেওয়াল লিখন, ব্যানার-ফেস্টুন বা পতাকার টক্কর সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না এলাকায়।

Advertisement

এ বারের ভোটের পরিবেশ যে একটু আলাদা খাতড়ার সাহেববাঁধ লাগোয়া সুভাষ রজকের চায়ের দোকানের আড্ডায় বসা হীরালাল সর্দার, উত্তম মহাপাত্রেরাও মানছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘এখানে এ বার ভোট নিয়ে তেমন তাপ-উত্তাপ দেখছি না। তেমন কোনও সভা বা প্রচার কর্মসূচিও দেখা যাচ্ছে না।’’ এই নীরবতা কিসের ইঙ্গিত, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, ‘‘ভোটের আগে মানুষ যখন চুপচাপ হয়ে যান, তখন শাসকের পক্ষে ভাল ইঙ্গিত হয় না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বঞ্চনার জবাব ভোটবাক্সে নীরবে দিতে তৈরি মানুষ।’’

বছরের গোড়ায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলে নানা কর্মসূচি করতে দেখা গিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে। রামনবমীতেও বিশাল শোভাযাত্রা দেখা গিয়েছে খাতড়ায়। তবে একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আবাস যোজনায় বাড়ি না হওয়া, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, পানীয় জল নিয়ে সমস্যায় জেরবার মানুষজনের ক্ষোভ ভোটের বাক্সে কতটা পড়বে তার হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। তাই রামনবমীর মিছিলের ভিড়ও স্বস্তি দিতে পারছে না গেরুয়া নেতৃত্বকে। আবার স্থানীয় সমস্যা, পঞ্চায়েত স্তরে বেনিয়মের অভিযোগ, এ সবের জেরে মানুষজনের আশীর্বাদ তৃণমূল কতটা পাবে, তা নিয়েও কিছুটা সংশয়ে ঘাসফুল শিবির।

Advertisement

বাঁকুড়া কেন্দ্রে এ বার নির্দল হিসাবে প্রার্থী দিয়ে ভোটে লড়তে চলেছে কুড়মি সংগঠন ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’। প্রচুর না হলেও কিছুটা কুড়মি ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কুড়মি-ভোটের বড় অংশ বিজেপি ও তৃণমূলের বাক্সে গিয়েছিল। এ বার কুড়মিরা পৃথক প্রার্থী দেওয়ায় বড় দলগুলিতে কেমন তার প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

তবে এই কেন্দ্রে কুড়মি-ভোট বিশেষ কিছু ভূমিকা নেবে না বলেই দাবি বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্বের। তবে আদিবাসী ভোট এই কেন্দ্রে বড় ফারাক গড়ে দিতে পারে। আদিবাসী নেতাদের একাংশ রাজ্য সরকারের লক্ষীর ভান্ডার, জয়জোহারের মতো আর্থিক সহায়তার প্রকল্পগুলির প্রশংসা করছেন। আবার আদিবাসী হস্টেল চালু না হওয়া, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া নিয়েও তাঁদের ক্ষোভ কম নেই।

এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘আদিবাসী শংসাপত্র নিয়ে যে দুর্নীতি এ রাজ্যে হয়েছে, তা সারা দেশে বিরল। আদিবাসী হস্টেলগুলি এখনও চালু করতে পারেনি। কেন্দ্র জঙ্গলমহলের উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করলেও এখানকার বাসিন্দারা পানীয় জল পাচ্ছেন না, রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভাল নয়।’’ পাল্টা বাঁকুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ বড় ভরসা এলাকার মানুষের। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সেটা বন্ধ করে দিল। আবাস যোজনাও বন্ধ করে দিল। জঙ্গলমহলের বিশেষ ‘ফান্ড’-ও বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহল নিয়ে যতটা ভাবেন, কেন্দ্রের কোনও নেতা বা প্রধানমন্ত্রী একটুও ভাবেন না।’’

জঙ্গলমহল কী ভাবছে? জানা যাবে ৪ জুন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement