অনীত থাপার সঙ্গে গোপাল লামা। —ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং ও কালিম্পঙে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন দ্বিতীয় দিনে পড়ল৷ আর সেই আন্দোলন থেকেই পাহাড়ের জন্য ভূমিপুত্র সাংসদের দাবি তোলা হল। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্না-আন্দোলনে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন আমলা গোপাল লামাও।
সম্প্রতি দলে যোগ দিয়েছেন গোপাল লামা। তাঁকেই আগামী লোকসভায় প্রার্থী করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে দলের আলোচনাও চলছে। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের জন্য ভূমিপুত্র সাংসদ চাই। গত ১৫ বছরে বিজেপি পাহাড়ের একটি দাবিদাওয়া পূরণ করেননি। শুধুই মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আর ভোট নিয়ে বোকা বানানো হয়েছে। তাই প্রয়োজন ভূমিপুত্র সাংসদ।’’ তিনি জানান, গত তিন দফায় বাইরে থেকে বিজেপি প্রার্থীদের নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছে। তাঁরা গোর্খাদের দাবি শুধু নয়, মনোভাব, আবেগ ‘বোঝেননি’। স্থানীয় মানুষ হলে, এলাকার সমস্যা বুঝবেন। সে মতো কাজও হবে। যদিও প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। তিনি বলেন, ‘‘অনীত থাপারা গোর্খাদের ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাহাড়ের পরিস্থিতি, অনুন্নয়ন, প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে চোখে ঘোরানোর কৌশল করা হয়েছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, গত লোকসভা ভোটে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা মনোনীত অমর সিংহ রাইকে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড় করানো হয়েছিল। তিনি দার্জিলিঙের বিধায়কও ছিলেন। তাঁকে হারান রাজু বিস্তা। রাজু বিস্তার যোগাযোগ, আত্মীয়তা এ জেলার সঙ্গে থাকলেও তিনি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেননি বলে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা প্রচারে এনেছে। দলের নেতারা জানাচ্ছেন, রাজু বিস্তার জন্ম উত্তর পূর্বাঞ্চলে। তিনি দিল্লিতেই মূলত থাকেন। দার্জিলিঙের প্রাক্তন সাংসদ যশোবন্ত সিংহ এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও ভূমিপুত্র নন। আবার বিজেপি দলের অন্দরে রাজু বিস্তার বদলে দেশের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামও সামনে এসেছে। তিনি দার্জিলিঙের লোক হলেও সারাজীবন কর্মসূত্রে দিল্লি, বিদেশেই থেকেছেন।
সে জায়গায় গোপাল লামা এ জেলায় দীর্ঘদিন আমলা স্তরে শীর্ষ পর্যায়ে চাকরি করেছেন। তাঁকেই মোটামুটি সামনে রেখে প্রচারে ধীরে ধীরে নামছে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। আর সঙ্গে দলের তরফে সুর চড়ানো হচ্ছে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ে। দলের সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেছেন, ‘‘বিজেপির হাতে গোর্খারা সুরক্ষিত নন। গত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা তা-ই বলছে। সামান্য সিআরপিএফ নিয়োগের পরীক্ষায় নেপালি ভাষাকে রাখা হয়নি। ১১ জনজাতি, পাহাড়-সমস্যা তো অনেক দূরের কথা। আমরা মানুষকে সেটাই বোঝাচ্ছি।’’
আজ, বুধবার পর্যন্ত দলের তিন দিনের ধর্না-কর্মসূচি চলবে। তার পরে কয়েক দিনের মধ্যে র্যালি এবং সভা ডাক দেওয়া হবে ঠিক হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জানান, এই ধর্না-আন্দোলন থেকেই মূলত লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হয়ে গেল। এর পরে, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই প্রার্থীর নাম সরকারি ভাবে প্রকাশ করে, দল পুরোপুরি ময়দানে নেমে পড়বে।