ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল নেতা জটিল মণ্ডল। — ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা ভোটের আগে বিতর্কিত মন্তব্য করে উত্তাপ বৃদ্ধি করলেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এক তৃণমূল নেতা। সম্প্রতি ভরা সভায় ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জটিল মণ্ডল হুমকির সুরে জানিয়ে দেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে বেইমানি করে তৃণমূলকে ভোট না দিলে এবং অপপ্রচার করলে হাত কেটে নেওয়া হবে। জটিলের সমালোচনা করতে গিয়ে পাল্টা তাঁরই হাত কাটার হুমকি দিয়ে বিতর্কের আগুন আরও ছড়িয়ে দেন বিজেপি নেতাও। সব মিলিয়ে ‘জটিল’তা কাটার লক্ষণ নেই অনুব্রত-ভূমে।
কখনও চড়াম-চড়াম ঢাক বা বোমা মারার নিদান, আবার কখনও গুড়-বাতাসার দাওয়াই — একটা সময় গরম গরম কেষ্ট-বাণী শুনলেই বোঝা যেত বীরভূমে ভোট আসছে। সেই কেষ্ট বর্তমানে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি। কিন্তু কেষ্টর ছেড়ে যাওয়া মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেওয়ার লোকের অভাব নেই বীরভূমে। তারই হাতেগরম উদাহরণ, জটিল। একদা জেলার রাজনীতির আবর্তে কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জটিল সম্প্রতি বিতর্কিত ভাষণ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন।
দলীয় সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে গত রবিবার বিকেলে ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের উলকুণ্ডা অঞ্চল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে প্রধান বক্তা ছিলেন জটিল। সেখানে বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি এমন কিছু কথা বলে ফেলেন, যা নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। বর্তমানে জটিলের ভাষণের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যেখানে জটিলকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কানে গুরু যেমন ফুসফুস করে মন্ত্র দেয়, তেমন ভাবে যেখানে যেমন, সেখানে ফুসফুসিয়ে বলে দিতে হবে যে, ভোটে একফোঁটাও বেইমানি করেছিস তো বাঁচবি না। ঘরে বসে থাকবি, তোর ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে একদম হাত কেটে নেব। একদম তোর হাত কেটে নেব।’’
এর পরে ওই ভিডিয়োয় তৃণমূল নেতা জটিল বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রীর দেওয়া ভাতা নিচ্ছিস, বৃদ্ধ বাবার জন্য ভাতা নিচ্ছিস, চাল খাচ্ছিস, জমির টাকা নিচ্ছিস, মেয়ের সাইকেল নিচ্ছিস, সব নিচ্ছিস আর ভোটটা অন্য দিকে মারবি! ছেড়ে কথা বলব না। দু’পাঁচ দিনের মধ্যে হুমকিটা দিয়ে দিতে হবে কারণ, ৭ তারিখের মধ্যে সেন্ট্রাল ফোর্স ঢুকবে। আমাদের দিকে হয়তো আসবে না, কিন্তু অন্য দিকে আসবে।’’ আনন্দবাজার অনলাইন এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। ভাষণ ঘিরে চাপানউতর শুরু হয়েছে বীরভূমে। বিজেপি জটিলের মন্তব্যের সমালোচনা করেছে। যদিও সমালোচনা করে বিজেপি নেতা যা বলেছেন, তাতে নতুন করে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, জটিলের সমালোচনা করতে গিয়ে সেই হাত কাটার হুমকির পাল্টা আশ্রয় নিয়েছে বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি যদি কারও হাত কাটতে পারেন, তা হলে এমন মানুষও থাকবেন যিনি ওঁর হাত কাটতে পারেন।’’ বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান তিনি।