কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কন্যাকুমারী পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যান করবেন তিনি। কন্যাকুমারী পৌঁছেই মোদী চলে যান ভগবতী আম্মান মন্দিরে। এর পর তিনি যান বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে। সূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ ধ্যানে বসেন মোদী। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাঁর ধ্যানে বসার কোনও ছবিই প্রকাশ্যে আসেনি। শেষ দফা ভোটের আগে মোদীর এই ধ্যান নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়ার ছবি যাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত না হয়, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তুলেছেন ছবি প্রসঙ্গে। সে কারণেই কি কন্যাকুমারীতে ধ্যানমগ্ন মোদীর কোনও ছবিই প্রকাশ্যে আসেনি? উঠছে প্রশ্ন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কন্যাকুমারীতে নামে মোদীর হেলিকপ্টার। এর পর তাঁর কনভয় পৌঁছয় ভগবতী আম্মান মন্দিরে। তাঁর পরনে ছিল সাদা ধুতি এবং সাদা চাদর। দক্ষিণ ভারতীয় কায়দায় লুঙ্গির মতো করে সেই সাদা ধুতি পরেছিলেন তিনি। এর পর মন্দিরে বিগ্রহ প্রদক্ষিণ করেন। প্রদীপের তাপ নেন। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ভগবতী আম্মানের বিগ্রহের একটি ছবি। সেটি তুলে দেন পুরোহিতেরা।
এর পর তিনি যান কন্যাকুমারী রক মেমোরিয়ালে। পরনে তখন সাদা শার্ট, সাদা ধুতি, গলায় উত্তরীয়। রক মেমোরিয়ালে তিনি রামকৃষ্ণ, সারদা দেবী এবং বিবেকানন্দের ছবি ও মূর্তিতে প্রণাম করেন। সেই ছবি দেখা গিয়েছে। তবে তার পর আরও কোনও ছবি এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। সূত্রের খবর, প্রায় ৪৫ ঘণ্টা ধ্যান করবেন মোদী। খাবেন তরল খাবার। যেমন ডাবের জল, আঙুরের রস-সহ অন্য ফলের রস। এই সময়কালে তিনি কথা বলবেন না। ‘মৌন ব্রত’ পালন করবেন। ধ্যানকক্ষ থেকে বাইরেও আসবেন না।
আগামী ১ জুন, শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণ। আট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ ওই দিন। ওই দফাতেই ভোট রয়েছে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। ৪ জুন ভোটগণনা। শেষ দফার ভোটের জন্য প্রচার শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। তার পরেই কন্যাকুমারী পৌঁছে যান মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর ছিল, ৩০ মে সন্ধ্যা থেকে ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত— দু’দিন বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যান করতে চলেছেন মোদী। সে কারণে সৈকতে জারি করা হয়েছে নিরাপত্তা। শনিবার পর্যন্ত সেখানে যেতে পারবেন না পর্যটকেরা। সাগরে কোনও বেসরকারি নৌকা চলবে না। কন্যাকুমারী জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২,০০০ পুলিশ কর্মী।
এর আগে দু’বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষেও আধ্যাত্মিক সফরে বেরিয়েছিলেন মোদী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচার শেষে গিয়েছিলেন কেদারনাথ। ২০১৪ সালে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের শিবাজির প্রতাপগড় দুর্গে।
সারা দেশ ঘুরে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে এসেছিলেন বিবেকানন্দ। মূল ভূখণ্ড থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি শিলায় বসে তিন দিন ধ্যান করেছিলেন তিনি। সেখানেই বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগরের মিলন হয়েছে। মনে করা হয়, সেখানেই আলোকপ্রাপ্ত হন বিবেকানন্দ। হিন্দু ধর্মে কথিত, যেখানে শিবের জন্য তপস্যা করেছিলেন পার্বতী, সেখানেই রয়েছে ওই শিলা। ওই শিলার উপর নাকি পার্বতীর পায়ের চিহ্নও রয়েছে। সেই শিলা— ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ ধ্যানে বসছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়ার ছবি যাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত না হয়, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। বুধবার তামিলনাডু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালকৃষ্ণণ দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে সিপিএম নেতা লেখেন যে, মোদী ব্যক্তিগত ভাবে কোথাও ধ্যানে বসতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়ার ঘটনা প্রচারমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে সপ্তম দফার ভোটে তা নির্দিষ্ট একটি দল (বিজেপি)-কে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেবে। কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সেই কারণে এই সম্প্রচার বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়েছেন বালকৃষ্ণণ।
একই আর্জি জানিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। বুধবার কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং সৈয়দ নাসির হুসেন কমিশনের দফতরে যান। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটির তরফে কমিশনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কংগ্রেসেরও বক্তব্য, মোদীর ধ্যানে বসার ছবি সরাসরি সম্প্রচারিত হলে দেশে শেষ দফার ভোটের আগে কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে। বুধবার এই নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করেন মমতাও। তিনি বলেন, “ধ্যান করবে তো ক্যামেরা নিয়ে কেন? লোকে ক্যামেরার সামনে ছবি তুলে পুজো করে?” এই আবহে কন্যাকুমারীতে ধ্যানে বসলেন মোদী। যদিও সেই ছবি প্রকাশ্যে আসেনি এখন পর্যন্ত।