(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সদস্যদের নিয়ে ঠাট্টাতামাশা। মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করে বিভাজনের রাজনীতি। ৪০০ পারের স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি, এনডিএ সরকার হ্যাটট্রিক করতে চলেছে—উত্তরপ্রদেশে পঞ্চম দফা নির্বাচনের আগে শেষ প্রচারে আজ দিনভর বরাবাঁকী, ফতেপুরের জনসভায় এই বিভিন্ন কৌশলের প্রয়োগ করতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
গত কাল ভাদোহির পর আজ বরাবাঁকী থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ না করে ‘বাবুয়াজির নতুন বুয়া’ হিসেবে ব্যঙ্গ করেছেন মোদী। মমতারই ‘বাইরে থেকে সমর্থন’ মন্তব্যের উল্লেখ করে ‘ইন্ডিয়া’কে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, ‘‘এখানে এসপি-র শাহজাদা (অখিলেশ যাদব) নতুন বুয়ার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) শরণ নিয়েছেন। এই নতুন বুয়াজি বাংলার। কিন্তু এই বাংলার বুয়া এখন আবার বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’কে বাইরে থেকে সমর্থন করবেন।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, কংগ্রেস ‘মিশন পঞ্চাশ’ অর্থাৎ ৫০টি আসন রাখার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছে। আর কংগ্রেস যাতে তফসিলি জাতি, জনজাতি, দলিত ওবিসি-র সংরক্ষণ মুসলিমদের হাতে তুলে না দিতে পারে, সে কারণেই ‘৪০০ পারের’ ডাক দিচ্ছেন তিনি।
অন্য দিকে, আজ সাংবাদিক বৈঠক করে মোদীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশকে। রমেশের দাবি, “ইউপিএ জমানায় গঠিত পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন তহবিলকে মোদী ক্ষমতায় এসে ২০১৫ সালে বাতিল করে দিয়েছিলেন। তাঁকে জবাব দিতে হবে, কেন এই তহবিল বাতিল করেছিলেন? কেন বিজেপি উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের অবহেলা করে এসেছে? কেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বারবার চিনি কল খোলার ব্যাপারে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন?” তাঁর কথায়, “ইউপিএ সরকার পরিকল্পনাটি এনেছিল ২০০৬ সালে, দেশের পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিকে উন্নত করতে। ২০১৩ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের পিছনে থাকা রাজ্যগুলি ৪০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে এই যোজনার জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় মোদী সরকার। রাজীব গান্ধী পঞ্চায়েত সশক্তিকরণ অভিযানে বার্ষিক অনুদান ১০০৬ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ষাট কোটি টাকায় নিয়ে আসে। এর ফলে উত্তরপ্রদেশের ফতেপুরের মতো জেলাগুলির উন্নয়নে বিরাট ধাক্কা লাগে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী কি বলে যাবেন কেন এই কাজ করেছিলেন?”
মোদী অবশ্য তাঁর বক্তৃতায় এই প্রশ্নগুলির জবাবের ধারকাছ দিয়ে যাননি। তাঁর দাবি, “মোদী সরকারের যে হ্যাটট্রিক হচ্ছে তা সবাই বুঝে গিয়েছেন। কংগ্রেস সম্মান বাঁচাতে ‘মিশন পঞ্চাশ’ তৈরি করেছে। অর্থাৎ যে ভাবে হোক ৫০টি আসন জোগাড় করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর যত দিন যাচ্ছে, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ শুকনো পাতার মতো খসে পড়ছে।’’
এর পর আপ-কংগ্রেসকে ব্যঙ্গ করে মোদী বলেন, “‘ইন্ডিয়া’রই একটি দল অন্য দলকে হুমকি দিচ্ছে, খবরদার পঞ্জাবে আমার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলবে না। এরা সবাই এমন স্বপ্ন দেখছে যে মুঙ্গেরিলালও হার মেনে যাবেন! আবার কংগ্রেস বলছে রায়বরেলী থেকেই প্রধানমন্ত্রী বাছাই হবে। শুনে এসপি-র শাহজাদার মন ভেঙে গিয়েছে, শুধু চোখ থেকে জলটাই যা ঝরেনি!” সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, যে দিন তিনি হিন্দু–মুসলমান বিভাজন করবেন সে দিনই তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা হারাবেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিভাজনের প্রচার করেন তিনি, যা অব্যাহত রয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিভাজনেরই রাজনীতি তিনি করছেন, কিন্তু কংগ্রেস, এসপি, তৃণমূলের দিকে অভিযোগের মুখ ঘুরিয়ে দিয়ে।
আজ যেমন মোদী বলেন, “কংগ্রেস, এসপি-র কাছে ভোটব্যাঙ্কই শেষ কথা। কিন্তু ওদের আসল চেহারা ফাঁস করে দিলেই জ্বরে ভুল বকার মতো বকতে থাকে। কংগ্রেসের শাহজাদা (রাহুল গান্ধী) বলছেন, আপনাদের রোজগার সোনাদানা, মঙ্গলসূত্র, সব এক্স রে করবেন। তারপর যারা ভোট জিহাদ করবে, তাদের তা দিয়ে দেবেন। এসপি-ও একই রাস্তায় হাঁটছে। ওদের সাম্প্রদায়িক আচরণের কথা ফাঁস করলেই বলছে, মোদী নাকি হিন্দু-মুসলমান করছে।’’
কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ‘রামলালাকে আবার তাঁবুতে’ ঢোকাবে এবং ‘রামমন্দিরে বুলডোজ়ার চালাবে’ বলে আজ দাবি করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে জুড়েছেন, “বুলডোজ়ার যদি চালাতেই হয়, তা হলে যোগী আদিত্যনাথের কাছ থেকে শিক্ষা নাও, কোথায় বুলডোজ়ার চালাতে হয়, আর কোথায় হয় না।” তাঁর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস। জয়রাম নিজের একটি ভিডিয়োয় আদিত্যনাথের ওয়েবসাইটের একটি নিবন্ধ দেখিয়েছেন।
ওই নিবন্ধের অংশবিশেষে বিজেপি তথা আরএসএস-এর সংরক্ষণ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট বলে জানিয়েছেন রমেশ। তাঁর মন্তব্য, “আপনারা দেখুন, মোদীর বুলডোজ়ার চলছে দলিত, জনজাতি, পিছিয়ে থাকা মানুষের উপর।”
আজ সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের দাদারে জনসভায় গিয়েও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুম্বইয়ের সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মোদীর দাবি, গত দশ বছরে তাঁর সরকার জঙ্গি সন্ত্রাস বন্ধ করে দিয়েছে। মুসলমানদের ‘ভোট জিহাদে’র কথা বলার পাশাপাশি তিন তালাক বন্ধ করার জন্য মুসলিম মেয়েদের আশীর্বাদ পাওয়ার দাবিও করেছেন।