ভোটের আগে সুতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু রুটমার্চ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
রুট মার্চের প্রথম দিনেই ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন সাধারণ মানুষ। ডোমকল পুর এলাকার নিদ্ধিনগর হিতানপুর ও গঙ্গা দাসপাড়া এলাকায় রুটমার্চ হয়েছে রবিবার। কিন্তু ডোমকল থানার গড়াইমারি ধুলাউড়ি ঘোড়ামারা এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটের সময় গোলমাল বেশি হয়েছিল। সেখানে রুট মার্চ হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন তুললেন সাধারণ মানুষ। তবে সেই অঞ্চলগুলোয় রুটমার্চ হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের তরফে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি দেখে কেউ বললেন, 'খাজনার থেকে বাজনা বেশি' এখন এ সব করবে, আর ভোটের দিন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ আবার শোনালেন, বিগত দিনের পুর নির্বাচনের কথা। বললেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের ভয়ে দিনভর বাড়িতেই শুয়ে থেকেছি, ভোট দেওয়া আর হয়নি।’’ কিন্তু ভোটের দিন ঘোষণার আগেই ডোমকলের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রুটমার্চ করে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করলেন ডোমকল থানার আইসি পার্থসারথি মজুমদার ও ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ। তাঁরা বললেন, ‘‘নিজের ভোট নিজে দেবেন, কোন সমস্যা হলেই থানায় যোগাযোগ করবেন।’’ আর তাঁদের মুখে এমন আশার কথা শুনে কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে সাধারণ মানুষ বললেন, দেখা যাক, এ বার তো লোকসভার ভোট, কেন্দ্রীয় বাহিনী কী করে।
ভোট মানে এক অন্য আতঙ্ক ডোমকল জুড়ে। ভোট এলেই কেঁপে ওঠে সাধারণ মানুষের বুক। পাড়ায় পাড়ায় পা রাখলেই নাকে আসে বারুদের গন্ধ। আর সন্ধ্যা নামলেই কানে পৌঁছয় বোমার শব্দ। কখনও বোমা বাঁধতে গিয়ে কখনও আবার বোমার ঘায়ে মৃত্যু হয় মানুষের। এলাকার অনেক মানুষের দাবি, বছর বছর ভোট দিতে গিয়ে কখনও ভোটকেন্দ্র থেকে ফিরে আসতে হয়, আপনার ভোট হয়ে গিয়েছে শুনে। কখনও আবার বোমার শব্দ শুনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছি। ডোমকলের বাসিন্দা আরমান শেখ বলছেন, ‘‘এখনও ভোট এলেই প্রশাসনের কর্তারা প্রচারে নামেন ভোটকে গণতন্ত্রের উৎসব বলে। কিন্তু আমাদের এলাকায় ভোট মানে আতঙ্ক। যে আতঙ্ক বাম ডান সব আমলেই ছিল ডোমকল জুড়ে।’’
কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার আগেই এ বার পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর সেই বাহিনী নিয়ে ইতিমধ্যেই রুট মার্চ শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। ভোটের অনেক আগেই ভারি বুটের এমন শব্দ শুনে, কিছুটা হলেও গণতন্ত্রের এই উৎসবকে নিয়ে ভরসা পাচ্ছেন আমজনতা। তাঁদের দাবি, পুলিশের তৎপরতা যদি সত্যি সত্যিই থাকে তাহলে কিছুটা হলেও রক্ষা মিলবে ডোমকলের। রুটমার্চ দেখে ডোমকল পুরসভার নুদ্ধিনগর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ভোটের অনেক আগেই যে ভাবে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ, তাতে কিছুটা হলেও বুকে বল পাচ্ছি। এটা যদি বজায় থাকে তাহলে অনেকটাই রক্ষে হবে ডোমকলের। যে কোনও রকমের অপরাধ সংগঠিত করতে ভয় পাবে অপরাধীরা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন, তারা নিরপেক্ষ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ালে আখেরে লাভ হবে ডোমকলের।’’
ডোমকলের কাটাকোপরা এলাকায় একটি কর্মতীর্থে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। সেখান থেকেই পুলিশ তাদের নিয়ে পৌঁছয় ডোমকল পুরসভার নিদ্ধিনগর, হিতানপুর ও গঙ্গা দাসপাড়া এলাকায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের পাশে দাঁড় করিয়ে পুলিশ কর্তারা আশ্বস্ত করেন সাধারণ মানুষকে। কিন্তু তারপরেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ভোট নিয়ে। সিপিএমের ডোমকলের এরিয়া কমিটির সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘‘আমরা চাই অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।’’