এইচডি কুমারস্বামী। ছবি: পিটিআই।
বিজেপি সমর্থিত হাসনের জেডিএস প্রার্থী প্রজ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে সরগরম কর্নাটক। এ বার সেই ঘটনায় পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটলেন জেডিএস নেতা তথা প্রজ্বলের কাকা এইচডি কুমারস্বামী। কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ডি কে শিবকুমারকে নিশানা করেছেন কুমারস্বামী। তাঁর অভিযোগ প্রজ্বলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক যড়যন্ত্র করা হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন শিবকুমার। ভোটের আগে পরিকল্পনামাফিক তিনিই পুলিশকে দিয়ে রাজ্য জুড়ে ২৫ হাজার পেন ড্রাইভ ছড়িয়ে দিয়েছেন। ওই পেন ড্রাইভেই প্রজ্বলের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন কেলেঙ্কারির প্রায় হাজার তিনেক ভিডিয়ো রয়েছে। অবিলম্বে শিবকুমারের সাসপেনশনের দাবি তুলেছেন কুমারস্বামী। যড়যন্ত্রে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার যুক্ত থাকার অভিযোগও তুলেছেন প্রজ্বলের কাকা। মূলত যে তিনটি কেন্দ্রে (হাসন, মাণ্ড্য, বেঙ্গালুরু গ্রামীণ) ভোটের আগে পেন ড্রাইভ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, সেইগুলিতেই সিদ্দারামাইয়া কংগ্রেস প্রার্থী জিতবেন বলে বার বার মন্তব্য করেছেন। কুমারস্বামীর অভিযোগ, ওই পেন ড্রাইভের মাধ্যমে ভিডিয়ো দেওয়ার জন্যই সিদ্দারামাইয়াকে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। আজকের বৈঠকে রাজ্য সরকার গঠিত সিট তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কুমারস্বামীর অভিযোগ, সিট আসলে সিদ্দারামাইয়া বা শিবকুমার তদন্তকারী দল।
কুমারস্বামী আজ বলেন, ২১ এপ্রিল রাত ৮টা নাগাদ প্রজ্বলের নির্বাচনী এজেন্ট পূর্ণচন্দ্রের কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তা আসে। নবীন গৌড়া নামে এক ব্যক্তির পাঠানো ওই বার্তায় লেখা ছিল, ‘প্রজ্বলের আপত্তিকর ভিডিয়ো প্রকাশের সময় গোনা শুরু’। এই বার্তা মেলার কিছুক্ষণের মধ্যে ধর্ষণ-যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়োগুলি ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে নবীনের পাশাপাশি কার্তিক গৌড়া (প্রজ্বলের গাড়িচালক), চেতন, পুত্তারাজু, পুত্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিলেন প্রজ্বলের নির্বাচনী এজেন্ট। কিন্তু কারও বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ প্রজ্বলের কাকার। তাঁর অভিযোগ ভিডিয়ো ছড়িয়ে মহিলাদের সম্মানলুটের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত।
পূর্ণচন্দ্রের অভিযোগ, নির্যাতনের ঘটনাগুলির ভিডিয়ো করে সেগুলি একটি পেন ড্রাইভেও জমা করেন তিনি। ভিডিয়োগুলি প্রকাশ্যে আসার পরে যদিও প্রজ্বল দাবি করেছিলেন, এই সকল ভিডিয়ো ভুয়ো। শুধু তাঁর ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টায় এমন ভিডিয়ো ছড়ানো হচ্ছে।
তবে, সমাজমাধ্যমে ভিডিয়োগুলি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আতঙ্কিত বহু নির্যাতিতা। স্থানীয় এক পুলিশকর্মী জানিয়েছেন, লোকলজ্জার ভয়ে বহু নির্যাতিতা ঘর ছাড়ছেন, নয়তো নিজেদের আটকে রাখছেন ঘরেই। ভিডিয়োগুলি সমাজমাধ্যম থেকে পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন বহু সমাজকর্মীও। কুমারস্বামীর অভিযোগ, ২৫ হাজার পেন ড্রাইভ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে কুমারস্বামীর প্রশ্ন, কেন কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না এই বিষয়ে?
কুমারস্বামী জানিয়েছেন, সরকারের উদ্দেশ্য নির্যাতিতাদের সুবিচার দেওয়া নয়, ওই ঘটনা থেকে ফায়দা তোলা। একই সঙ্গে প্রজ্বলের বাবা এইচডি রেভান্নার দ্রুত গ্রেফতারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কুমারস্বামী জানিয়েছেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে রেভান্নাকে গ্রেফতার করা হয়, সেখানে সরাসরি রেভান্নার নাম ছিল না। প্রজ্বলের বিরুদ্ধে মহিলাদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়ো অভিযোগ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন কুমারস্বামী। প্রজ্বলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জনসভা থেকে রাহুল গান্ধী কী ভাবে সরাসরি অভিযোগ তুলতে পারেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে রাহুলকে কেন সিট তলব করছে না, প্রশ্ন তুলেছেন কুমারস্বামী।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা জেডিএস প্রধান এইচডি দেবগৌড়ার নাতিকে প্রজ্বল দেশে ফেরাতে ইতিমধ্যে ‘ব্লু কর্নার’ নোটিসের জন্য ইন্টারপোলকে আর্জি জানিয়েছে সিবিআই। প্রশ্ন উঠেছে, ‘রেড কর্নার’-এর পরিবর্তে ব্লু কর্নার নোটিস কেন জারি হল? মহিলাদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রজ্বলের বাবা রেভান্নার বিরুদ্ধেও। গ্রেফতারও করা হয়েছে তাঁকে।