প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভা ভোটের আগে শিলিগুড়ির কাওয়াখালির সরকারি সভা থেকে ৪৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার মধ্যে রয়েছে শিলিগুড়ি থেকে রাধিকাপুর পর্যন্ত চালু ডেমু ট্রেন পরিষেবা। বছর তিনেক আগে চালু হওয়া ঘোষপুকুর-ধূপগুড়ি চার লেনের সড়কের একাংশও। ইসলামপুর বাইপাস। এ ছাড়া, রেলের অন্তত ৬টি শাখার বৈদ্যুতিকীকরণ, সিগনালিং ব্যবস্থা। ভোটের মুখে এ সব ঘটা করে উদ্বোধনের বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা নানা প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সঙ্গে পাহাড়ের সমস্যা, গোর্খা ভাইবোনদের সমস্যা নিয়ে সংবেদনশীল এবং সমাধানে নিরন্তর চেষ্টা করছেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়েও।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘ভোটের আগে সমস্ত পুরনো কাজ উদ্বোধন করছেন। পাহাড় সমস্যা সমাধান নিয়েও প্রধানমন্ত্রী সুলভ কোনও কথা বলতে পারেননি। ১০ বছর রয়েছেন। সমস্যা মেটাতে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। এই সরকার কোনও দিন পারবেও না। এই সরকার পরিবর্তন হলে সমস্যার সমাধান হবে।’’ সেই সঙ্গে তার অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার উত্তরবঙ্গের জন্য মূল কাজগুলোও করতে পারেনি। তার মধ্যে চা বাগানের ন্যূনতম মজুরি, চা শিল্পের পুনরুজ্জীবনে কোনও প্যাকেজ ঘোষণা যেমন রয়েছে, তেমনই পর্যটনের জন্য বিশেষ কিছু ঘোষণাও। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল, একটা আইআইটি বা কেন্দ্রীয় কোনও প্রতিষ্ঠান খোলার কথা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেননি বলে অভিযোগ। মালদহের গঙ্গা ভাঙন বা শিল্প নিয়ে কোনও পরিকল্পনাও জানাননি। জিটিএ প্রধান অনীত থাপার কথায়, ‘‘পাহাড়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী সে ভাবে কিছু ঘোষণা করতে পারেননি। বছরের পর বছর এ ভাবেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকসভা ভোট পার করছেন এ বার তা হচ্ছে না।’’
ভোটের মুখে প্রকল্প করা নিয়ে তোপ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যেরও। তিনি বলেন, ‘‘তিন বছর আগে চালু হয়েছে যে রাস্তা, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী তা ফের উদ্বোধন করার মানে কী? তিনি দেশের ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী। যা মনে হয় করেন। এর জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হল কেন?’’ সেই সঙ্গে পাহাড় নিয়েও কেন্দ্রযে আন্তরিক নয় সেই অভিযোগও তুলে বলেন, ‘‘গোর্খাদের স্বপ্ন পূরণ করব বলেছিলেন। অর্থাৎ স্থায়ী সমাধান করবেন। অথচ ১১টি জনজাতি তাদের স্বীকৃতি চাইছে সেটাও করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর থেকেও নিজেকে উঁচু স্তরের, ভগবানের দূত, ঈশ্বরের দূত মনে করেন তিনি। ৪৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন কেন? ৫০ হাজার কোটি টাকার হওয়া দরকার।’’ পাহাড়ের কংগ্রেস নেতা বিনয় তামাংয়ের কথায়, ‘‘সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের কাজ জর্জ ফার্নান্ডেজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে পাশ হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে। সেই প্রকল্পের মধ্যে সেখানে বৈদ্যুতিকীকরণ সব রয়েছে।’’ পুরনো তৈরি সড়ক উদ্বোধন নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। দার্জিলিঙের সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘বিরোধীরা যা-ই বলুন, উত্তরে মোদীর নেতৃত্বে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে।’’