Lok Sabha Election 2024

ভোটাধিকার থাকুক চান না মোদী, বিরোধী তোপ

ভোটদাতাদের উদ্দেশে তাদের সতর্কবার্তা, ‘বুঝে শুনে ভোট দিন, মোদী জিতলে আগামী দিনে আর ভোটের সুযোগ না-ও থাকতে পারে’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

প্রবল গ্রীষ্মের দ্বিপ্রহরেও কানায় কানায় পূর্ণ রাঁচীর প্রভাত তারা গ্রাউন্ড। যা দেখে উজ্জীবিত বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব। তৃতীয় সমাবেশে (উলগুলান ন্যায় মহাসভা) জনজাতির প্রতি বঞ্চনা, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধিকে ভোট-ভাষ্যের কেন্দ্রে এনে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তুলধোনা করল কংগ্রেস, এসপি, আরডেজি, আপ, এনসি, জেএমএম-সহ বিরোধী বিভিন্ন দল। ভোটদাতাদের উদ্দেশে তাদের সতর্কবার্তা, ‘বুঝে শুনে ভোট দিন, মোদী জিতলে আগামী দিনে আর ভোটের সুযোগ না-ও থাকতে পারে’।

Advertisement

আজ রাঁচীর সমাবেশে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, এসপি-র অখিলেশ যাদব, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, আপ-এর ভগবন্ত সিংহ মান, এনসি-র ফারুক আবদুল্লারা। হেমন্ত সোরেন এবং অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মাসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের জনসভার পরে এ বার রাঁচীতে। প্রসঙ্গত, রাহুলের ন্যায়যাত্রা শেষের পরে গত মার্চে মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র জনসভা হয়েছিল। তাতে যোগ দেয়নি তৃণমূল। আজ বিরোধী নেতাদের সম্মিলিত দাবি— ৪০০ দূরের কথা, ১৫০-ও পার করবে না বিজেপি।

শরীর খারাপের কারণে রাঁচীর সমাবেশে হাজির হতে পারেননি রাহুল। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কথায়, “সাতনা এবং রাঁচীতে প্রচারসভার জন্য তৈরি ছিলেন রাহুল গান্ধী। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পডায় আজ দিল্লি ছাড়তে পারলেন না। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে অবশ্যই জনসভায় উপস্থিত থাকবেন।”

Advertisement

সাতনা থেকে একটু দেরিতেই রাঁচীর মঞ্চে পৌঁছন খড়্গে। তিনিও বক্তৃতার শুরুতে রাহুলের অসুস্থতার কারণে না আসতে পারার খবর দেন। তিনি ঝাড়খণ্ডের ভোটারদের সাবধান করে বলেন, “এ বারে অবশ্যই ভোট দিতে যাবেন। কারণ এ বারের সুযোগ খোয়ালে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা আর আপনার না-ও থাকতে পারে। এটাই মোদী চান।” বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটব্যাঙ্ক-রাজনীতির জন্য জনজাতি তোষণের অভিযোগ এনে কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “বিজেপি কেবলই বলে, তারা জনজাতি সম্প্রদায়ের এক জনকে রাষ্ট্রপতি করেছে। আরে সেটা তো তোমরা ভোট পাওয়ার জন্য করেছ! জনজাতি সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য নয়। বরং জনজাতির আবেগে ধাক্কা দিয়েছ তোমরা। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার সময় তোমরা দ্রৌপদী মুর্মুকে ডাকলে না কেন? নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের সময়েও নয়। এটা কি অপমান নয়?” বেকারত্ব নিয়ে খড়্গের আক্রমণ, “ক্ষমতায় এসে মোদী যুবাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রতিবছর দু’কোটি চাকরি হবে। ১০ বছরে যার পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ কোটি। কোথায় গেলেন মোদী-সাব? আপনি মিথ্যা বলেছিলেন। কালো টাকা উদ্ধার করে গরিবের পকেটে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেবেন বলেছিলেন। মোদী আসলে মিথ্যাবাদীদের সর্দার।” প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধে দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করার অভিযোগ তুলে খড়্গে বলেন, “উনি বলেন দুর্নীতিগ্রস্তদের ছাড়বেন না। অথচ তাদেরই কোলে বসিয়ে রেখে, তাদের চাঁদা নিয়ে তাদেরই ব্যবসা দেন।”

দীর্ঘ এবং ঝাঁঝালো বক্তৃতা দেন লালুপ্রসাদের পুত্র আরজেডি-র তেজস্বী। তাঁর কথায়, “আমরা এখানে মোদীর কথা বলতে আসিনি, এসেছি কিছু বিষয়ের কথা বলতে। যার মধ্যে রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কৃষক সমস্যা, কাজের সমস্যা। ঝাড়খণ্ডে এত ভাল উন্নয়নের কাজ চলছিল, সেটা মোদীর হজম হয়নি। হেমন্ত সোরেনকে জেলে পুরে দিলেন। আমার বাবার সঙ্গেও এটা হয়েছে। কিন্তু ভয় পাওয়ার লোক আমরা নই। মনে রাখবেন ভগবান কৃষ্ণের জন্ম কারাগারেই হয়েছিল।”

এসপি প্রধান অখিলেশ যাদবের তির্যক মন্তব্য, “ময়দানে পালোয়ানেরা যখন জানে যে তারা হারছে, তখন খামচে-আঁচড় দিয়ে কামড়িয়ে জিততে চায়। বিজেপি যেন এটা ভুলে না যায়, তারা বাঘকে গ্রেফতার করেছে কিন্তু তার তেজকে করতে পারেনি।” কংগ্রেসের মতো তিনিও সতর্ক করে দিয়েছেন। ভোটারদের দায়িত্ব নিয়ে ভোট দিতে বলেন অখিলেশ। দাবি করেন, এ বার না দিলে আর ভোট দেওয়ার সুযোগ না-ও আসতে পারে।

পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের বক্তব্য, “ঝাড়খণ্ড গরিব নয়, সম্পদশালী। কিন্তু একে গরিব করে রাখা হয়েছে। এখানকার কয়লা এবং অন্যান্য খনির উপর কেন্দ্রের নজর। তোমরা মুখ্যমন্ত্রীদের আটকে রাখতে পারো কিন্তু ওদের চিন্তাভাবনাকে তো পারবে না।” তাঁর মতে, প্রথম দফার ১০২টি আসনে ভোটের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০টি ‘ইন্ডিয়া’ জিততে চলেছে।

এনসি নেতা তথা কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা বলেন, “এরা রামকে বিক্রি করছে, কিন্তু রামের স্বরূপ জানে না। রাম গোটা বিশ্বের, সবার। আর বিজেপি নিজেদের কুক্ষিগত করতে চেয়েছে।” প্রধানমন্ত্রীর খয়রাতি রাজনীতি সম্পর্কে ফারুকের মন্তব্য, “মোদী সরকার বলে তারা নাকি আনাজ দিচ্ছে মানুষকে বিনামূল্যে। ওরা কি নিজেদের ঘর থেকে ওই আনাজ দেয়? এটা কৃষকদের শ্রমের ফল।”

রামলীলার সভার মতোই এখানেই দু’টি চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল, কেজরীওয়াল আর হেমন্তের নামে। মঞ্চে আগাগোড়া বসেছিলেন জেএমএম নেতা শিবু সোরেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement