প্রকাশ চিক বড়াইককে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বীরপাড়ার ডিমডিমা চাবাগানর যাত্রা ময়দানে। —নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতিতে নাম জড়ানো কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের দলীয় বিধায়ক পরেশ অধিকারীকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা’ বলে উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কোচবিহার রাসমেলার মাঠে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভামঞ্চেই হাজির ছিলেন পরেশ। তাঁর চেয়ার ছিল প্রথম সারিতেই। বক্তব্যের শুরুতে মঞ্চে উপস্থিত দলীয় নেতাদের নাম নিচ্ছিলেন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে রয়েছেন উদয়ন গুহ, অরূপ বিশ্বাস।...আমাদের প্রার্থী জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, নিপাট ভদ্রলোক। যিনি জিতবেন আপনাদের আশীর্বাদে। রবি (রবীন্দ্রনাথ ঘোষ) আমার চিরকালের পরিচিত, কাজ করেছে।” এর পরেই পরেশ অধিকারীর নাম করে তিনি বলেন, “পরেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা।” মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরেই দুর্নীতি-প্রসঙ্গে তৃণমূলকে বিঁধেছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল সরকার ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ মানুষে ভরে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই চলছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণে তাঁদের সম্পর্কে ভাল কথা বলতে হচ্ছে তাঁকে। বিজপির কোচবিহার লোকসভা আসনের প্রার্থী তথা বিদায়ী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কথায়, “যিনি যত বেশি দুর্নীতি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে তাঁর গুরুত্ব তত বেশি।” কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ সরকারেরও কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। আইনের কাছে তৃণমূলের ওই নেতারা গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের গুরুত্ব না দিলে আরও অনেক তথ্য বাইরে আসতে পারে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি দীপক সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে চলছেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত।” শাসক দলের একটি অংশের দাবি, পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও, মেখলিগঞ্জের সংগঠন ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন পরেশ। শাসক দলের প্রত্যেক সভাতে ভিড় হয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
পরেশ অধিকারী কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের বিধায়ক। তিনি বিধায়ক হওয়ার পরে শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। আদালতের রায়ে তাঁর মেয়ে অঙ্কিতাকে শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়। পরেশের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। সিবিআই দফতরেও হাজিরা দিতে হয়েছে পরেশকে। সিবিআইয়ের চার্জশিটেও নাম রয়েছে পরেশ ও তাঁর মেয়ের। যার জেরে, মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়েও দেওয়া হয় পরেশকে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের প্রচারে নিজের এলাকাতেই বেশি সময় দিচ্ছেন পরেশ। মেখলিগঞ্জ জলপাইগুড়ি লোকসভার অংশ। তাই কোচবিহারে লোকসভা এলাকায় এর আগে পরেশকে সে ভাবে দেখা যায়নি। তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় মঞ্চে ছিলেন তিনি। পরেশ বলেছেন, “আজকের সভায় প্রচুর ভিড় হয়েছে। তা দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়েছেন। উনি কাকে, কী ভাবে দেখছেন সেটা উনিই বলবেন।’’